সমতট ডেস্ক : চাশত বা দুহা—একটি ফজিলতপূর্ণ নফল নামাজ। নবীজি (স.) উম্মতকে এই নামাজ আদায় করতে উৎসাহ দিয়েছেন। সূর্য উঠার ১৫ মিনিট পর থেকে ইশরাক নামাজের সময় আর ইশরাকের পর সূর্যের তাপ প্রখর হয়ে উঠলে চাশত বা দোহা শুরু হয় এবং তা দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে অনেকে ইশরাক, চাশত বা দোহা সবগুলোকে একই নামাজ বলেছেন। যা-ই হোক সবগুলোই আসলে নফল নামাজ। এখানে এই নফল নামাজের ৬টি উপকার তুলে ধরা হলো।
১. শরীরের প্রতিটি জয়েন্টের সদকা আদায় হয়
বুরাইদাহ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি- ‘মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড়া আছে। অতএব, মানুষের কর্তব্য হলো প্রত্যেক জোড়ার জন্য একটি করে সদকা করা। সাহাবায়ে কেরাম বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কার শক্তি আছে এই কাজ করার?’ তিনি বলেন, ‘মসজিদে কোথাও থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোনো ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকাত নামাজ এর জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ: ৫২৪২)
২. আল্লাহওয়ালাদের ইবাদত
একজন পরহেজগার ব্যক্তি সবসময় আল্লাহর সন্তুষ্টির কাঙ্গাল। কোনো মর্যাদাপূর্ণ সুন্নত থেকে তারা গাফেল হতে চান না। আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) এক যোদ্ধাবাহিনী প্রেরণ করেন। এই যুদ্ধ সফরে তারা বহু যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভ করে খুব শীঘ্রই ফিরে আসে। লোকেরা তাদের যুদ্ধক্ষেত্রের নিকটবর্তিতা, লব্ধ সম্পদের আধিক্য এবং ফিরে আসার শীঘ্রতা নিয়ে আলোচনা করতে লাগল। তা শুনে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে ওদের চেয়ে নিকটতর যুদ্ধক্ষেত্র, ওদের চেয়ে অধিকতর লব্ধ সম্পদ এবং ওদের চেয়ে শীঘ্রতর ফিরে আসার কথার সন্ধান বলে দেব না? যে ব্যক্তি সকালে অজু করে চাশতের নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে যায় সে ব্যক্তি ওদের চেয়ে নিকটতর যুদ্ধক্ষেত্রে যোগদান করে, ওদের চেয়ে অধিকতর সম্পদ লাভ করে এবং ওদের চেয়ে অধিকতর শীঘ্র ঘরে ফিরে আসে।’ (আহমদ, তাবারানি, সহিহ তারগিব: ৬৬৩)
৩. স্বয়ং নবীজির ওসিয়ত পালন
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমার প্রিয়তম রাসুল (স.) আমাকে তিনটি বিষয়ে ওসিয়ত করেছেন, যেন আমি তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ত্যাগ না করি। তা হলো- ১. প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা। ২. সালাতুত দোহা তথা চাশতের নামাজ আদায় করা। ৩. ঘুমানোর আগে বিতর আদায় করা।’ (বুখারি: ১১৭৮)
৪. ফজর ও চাশত মিলে হজ ও ওমরার সওয়াব
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, তারপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তাআলার জিকির করে, তারপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তার জন্য একটি হজ ও একটি ওমরার সাওয়াব রয়েছে। আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (হজ ও ওমরার সওয়াব)। (তিরমিজি: ৫৮৬)
৫. পাপরাশি ক্ষমা হয়ে যায়
নফল নামাজ গুনাহ মাফের অনন্য মাধ্যম। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার নবীজি (স.) তাকে বললেন- জেনে রাখো, তোমার প্রতিটি সেজদার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং একটি গুনাহ মিটিয়ে দেবেন। (মুসনাদে আহমদ: ২২২০)
৬. জান্নাতে নবীজির সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য
জান্নাতে নবীজির সঙ্গী হতে চাইলে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছেন প্রিয়নবী (স.)। রবিয়া আসলামি (রা.) বলেন, আমি (কখনো কখনো) রাতে নবীজির সঙ্গে থাকতাম। এক রাতে আমি তার জন্য অজু-ইস্তেঞ্জার পানির ব্যবস্থা করলাম। তিনি (খুশি হলেন) বললেন, রবিয়া! তুমি যা খুশি চাইতে পারো। রবিয়া বলেন, তখন আমি বললাম, ‘জান্নাতে আপনার সঙ্গে থাকতে চাই।’ নবী কারিম (স.) বললেন, আর কী চাও? (এবারও রবিয়ার একই উত্তর, তিনি বলেন) আমি তখন বললাম, আমার ওই একটাই চাওয়া। একথা শুনে নবী কারিম (স.) বললেন, তাহলে ‘কাসরাতুস সুজুদ’ তথা বেশি বেশি নফল নামাজের মাধ্যমে আমাকে এ বিষয়ে সাহায্য করো। (সহিহ মুসলিম: ৪৮৯)
আল্লাহ আমাদেরকে যা শিখি, তা থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।