সমতট ডেস্ক: বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ে আবারও পিছিয়ে পড়েছে দেশের প্রাচীনতম ও প্রধান বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের প্রকাশিত ‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২৬’-এ ঢাবির অবস্থান এবার ৫৮৪তম। গত বছর (২০২৪ সালের তালিকা) এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৫৫৪তম, অর্থাৎ ৩০ ধাপ অবনতি হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার কিউএস তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের শীর্ষ ১,৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের মোট ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ঢাবি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে থাকলেও বৈশ্বিক তালিকায় এর অবনমন ঘটেছে।
গতবারের মতো এবারও দেশের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), যার অবস্থান ৭৬১-৭৭০ ব্যান্ডে অপরিবর্তিত রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে, তবে তারাও ৫০ ধাপ পিছিয়ে এবার ৯৫০-১০০০ ব্যান্ডে অবস্থান করছে, যা গতবার ছিল ৯০১-৯৫০।
ঢাবির স্কোর বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাদের সামগ্রিক স্কোর ২৮.৭০। গবেষণা ও আবিষ্কার সূচকে একাডেমিক খ্যাতিতে স্কোর ৩০.৫০ হলেও শিক্ষকপ্রতি গবেষণা উদ্ধৃতিতে মাত্র ৬.৯০। শিখন অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে স্কোর ১০.৫০। কর্মসংস্থান সূচকে কর্মসংস্থানের ফলাফলে ঢাবির স্কোর ৯৭ এবং চাকরির বাজারে সুনামে ৫১.৩০, যা তুলনামূলকভাবে ভালো। তবে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক অনুপাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি যথাক্রমে মাত্র ১.৪০ ও ২.২০ স্কোর করেছে।
এছাড়াও, ঢাবি আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্কে ৫৭.৮০ এবং স্থায়িত্ব সূচকে ৫৪.২০ স্কোর অর্জন করলেও ইন্টারন্যাশনাল ফি, স্কলারশিপ, ইংলিশ টেস্ট এবং একাডেমিক টেস্ট সূচকে কোনো স্কোর পায়নি। বিশ্লেষকদের মতে, দেশীয় শিক্ষার্থীর শতভাগ উপস্থিতি থাকলেও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি এই সূচকে ঢাবিকে পিছিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (১০০১-১২০০), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (সবই ১২০১-১৪০০ ব্যান্ডে) স্থান পেয়েছে। এছাড়া আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চুয়েট, ইস্ট ওয়েস্ট, আইইউবি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েট ও রুয়েট র্যাঙ্কিংয়ের ১৪০০-এর পরবর্তী ব্যান্ডে অবস্থান করছে।
বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে স্বীকৃত এই র্যাঙ্কিংয়ে এবারও প্রথম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। পরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক মান, গবেষণা, আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা, কর্মসংস্থান, টেকসই উন্নয়ন ও শিক্ষার অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে কিউএস মোট ৯টি সূচকের ভিত্তিতে এই র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে।
মূলত, আন্তর্জাতিক ফান্ডিং ও বৈশ্বিক সম্পৃক্ততার ঘাটতি এবং গবেষণার মান ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই ঢাবির মতো প্রতিষ্ঠানের ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিকীকরণের প্রতি গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।