শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চমকপ্রদ জয় লাভ করেছেন বামপন্থি প্রার্থী অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েকে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, বিরোধীদল নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা এবং ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহেকে হারিয়ে তিনি বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন।
রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনার পর নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে দিসানায়েকের বিজয় ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে ৫৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিক দেশটির প্রথম বামপন্থি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। ২০২২ সালে গণবিক্ষোভের মুখে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট দেশ ছাড়ার পর দুই বছরেরও বেশি সময় পর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলো শ্রীলঙ্কা।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দিসানায়েকে ৪২.৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন, যেখানে সাজিথ প্রেমাদাসা ৩২.৭৬ শতাংশ এবং বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
দিসানায়েকে: এক রূপকথার উত্থান
রাজনৈতিক অঙ্গনে দিসানায়েকের আবির্ভাব একটি গল্পের মতোই। ক্ষমতাসীনদের চেয়ে অনেকটা আলাদা ভঙ্গিতে তিনি নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন। ১৯৬৮ সালে জন্ম নেওয়া দিসানায়েকে ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি শ্রীলঙ্কার দুর্নীতি ও দুর্বল শাসনের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
১৯৯৫ সালে তিনি জনতা বিমুক্তি পুরামুনার (জেভিপি) পলিটব্যুরোতে যোগ দেন এবং ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি কৃষি, প্রাণিসম্পদ, ভূমি এবং সেচ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রধান বিরোধী দলের হুইপ ছিলেন।
জেভিপির নেতা হিসেবে ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর, দিসানায়েকের নেতৃত্বে দলটি ক্রমশ রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে থাকে। এবারের নির্বাচনে তিনি এনপিপি জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, যা আগে কখনও শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলও ছিল না।
আন্দোলন ও পরিবর্তনের ডাক
২০২২ সালের গণবিক্ষোভে জেভিপির সক্রিয় ভূমিকা এবং পরিবর্তনের আহ্বান দলটির জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি জনগণকে আকৃষ্ট করেছে, যার ফলে দিসানায়েকের প্রতি ব্যক্তিগত সমর্থনও বেড়েছে।
গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে জেভিপি দুটি বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়, যা দমন করতে সরকার ব্যাপক নিপীড়ন চালায়। সহিংস পথ ছেড়ে আসার পর, দিসানায়েকে শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন অংশের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে সক্ষম হন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সাফল্যই তাকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে।
শ্রীলঙ্কার জন্য অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েকের প্রেসিডেন্সি নতুন দিক নির্দেশ করবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে তার অপ্রত্যাশিত উত্থান ইতোমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।