সমতট ডেস্ক: চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) থেকে বিদায়ের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে বেসরকারি টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের। প্রায় দুই দশক ধরে টার্মিনালটি পরিচালনার পর আগামী ৭ জুলাই তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরপর ৮ জুলাই থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তত্ত্বাবধানে টার্মিনালটি পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও আসেনি, তবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে চুক্তি আর না বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সাইফ পাওয়ারটেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও বিদেশি অপারেটর নিয়োগের বিতর্ক:
অভিযোগ রয়েছে, সাইফ পাওয়ারটেক এতদিন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে মনোপলি ব্যবসা চালিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় থেকে টার্মিনালটিতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও অব্যাহত রাখে। দুবাইভিত্তিক টার্মিনাল অপারেটর ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কাজের প্রক্রিয়া শুরু হলেও, বিদেশি অপারেটর নিয়োগকে কেন্দ্র করে নানামুখী বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বন্দরের শ্রমিক কর্মচারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনগুলো একযোগে আন্দোলনে নামে, যাদের পেছনে বর্তমান অপারেটর প্রতিষ্ঠানের উসকানি ছিল বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। এই বিতর্কের কারণে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়ার গতি কিছুটা মন্থর করে সরকার।
বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি ও চ্যালেঞ্জ:
সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্তের পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জোরেশোরে এনসিটি পরিচালনার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। গত বুধবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিশেষজ্ঞরা কিছু চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন। চট্টগ্রাম বন্দরের পরিকল্পনা ও প্রশাসন বিভাগের সাবেক সদস্য জাফর আলম জানান, ২০০৭ সালের আগে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বন্দরের হাতেই ছিল, কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা মোটেই ভালো ছিল না। কথায় কথায় ধর্মঘটসহ নানা রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। তিনি মনে করেন, স্বল্প সময়ের জন্য এটি ঠিক হলেও দীর্ঘমেয়াদে নিজস্ব পরিচালনায় শ্রমিক জোগান দেওয়াসহ বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
বার্থ শিপ হ্যান্ডলিং ও টার্মিনাল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার মতে, স্বল্প সময়ের জন্য হলেও নিজস্ব পরিচালনায় বন্দরের একটি নতুন অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেছেন, বন্দর ব্যবহারকারীদের কাছে কে টার্মিনাল চালালো সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং কতটা দ্রুত সেবা পাওয়া যাচ্ছে সেটাই মুখ্য। তিনি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণে বন্দরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন, “এ দিকগুলো বন্দর কীভাবে মোকাবিলা করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।”
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না এলেও এনসিটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি শুরু করেছে। তিনি মনে করেন, এতদিন এক নিয়মে পরিচালিত হওয়ার পর নতুন নিয়মে কিছুটা চ্যালেঞ্জ আসবে, তবে বন্দরের সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার দক্ষতা ও প্রস্তুতি দুটোই আছে।