সমতট ডেক্স : নতুন সিস্টেমে আটকে গেছে বেসরকারি স্কুল-কলেজের ৪০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর ডিসেম্বর মাসের বেতন-ভাতা। এতে তারা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
রাজশাহীর বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজের শিক্ষক তসলিম আলম বলেন, জানুয়ারি থেকে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটির মাধ্যমে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কয়েক মাসের ট্রায়ালের পর শিক্ষকদের বেতন ইএফটিতে দেওয়া শুরু হলেও নানা জটিলতায় এখনো ডিসেম্বর মাসের বেতন পাননি ৪০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
মসজিদ মিশন একাডেমি রাজশাহীর অধ্যক্ষ শাহাদাত হোসেন বলেন, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটি চালুর আগে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দ্রুত পাওয়া যেত। এখন মধ্য ফেব্রুয়ারি চললেও জানুয়ারি মাসের বেতনই পাননি। অনেক শিক্ষক-কর্মচারী ডিসেম্বর মাসের বেতনও পাননি। অনাকাঙ্ক্ষিত এই জটিলতা নিরসনে সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
এদিকে, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মাউশির ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট উইংয়ের পরিচালক গোপীনাথ পাল। তবে আপডেট তথ্য জানতে ইএমআইএস সেলে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
ভুক্তভোগী মসজিদ মিশন একাডেমি রাজশাহীর ইসলাম শিক্ষার প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখনো ডিসেম্বরের বেতন-ভাতা না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছি।
রাজশাহীর বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজের কর্মচারী শহিদুল ইসলাম বলেন, সামান্য ভুলের কথা বলে এখনো ডিসেম্বরের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে দ্রুত বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেল সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য যাচাইকালে অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর ডাবল এমপিও এবং ভুল তথ্য দিয়ে এমপিও নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। এ ছাড়া অনেকের মাউশির এমপিও শিটের তথ্যের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের মিল নেই। আবার অনেকের ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের মিল নেই। বিষয়গুলো সমাধান করে চতুর্থ এবং পঞ্চম ধাপে শিক্ষকদের ডিসেম্বর মাসের বেতন ছাড়ের চেষ্টা চলছে।
ইএমআইএস সেলের কর্মকর্তারা বলছেন, তৃতীয় ধাপে যারা বেতনবঞ্চিত হয়েছেন তাদের মধ্যে আট হাজারের কিছু বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ছাড় করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসারের কাছে তথ্য পাঠানো হয়। শিগগিরই চতুর্থ ধাপের বেতন ব্যাংকে পাঠানো হবে।
মাউশিসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের ৩ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য যাচাই শেষে প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ডিসেম্বর মাসের বেতন পেয়েছেন ইএফটিতে। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার এবং তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার ৭০০ শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটিতে বেতন পেয়েছেন। সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটিতে ডিসেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পেয়েছেন। সে হিসাবে এখনো ডিসেম্বর মাসের বেতন পাননি ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী।