সমতট ডেস্ক : চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও নতুন গঠিত এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা পুরো নির্বাচনী এলাকাকে সরব করে তুলেছে। ঈদের আগে থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রার্থিতার ইচ্ছা জানাচ্ছেন এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
বাঁশখালী আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯০৬ জন, যার মধ্যে ২ লাখ ২ হাজার ৩২১ জন পুরুষ, ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫৮১ জন মহিলা এবং ৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। যদিও আসনটি ঐতিহাসিকভাবে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য ছিল। তবে আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্তি নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা: সাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর মৃত্যুর পর বাঁশখালীর রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হয়েছে। তার দুই ছেলে এবার বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা হলেন:
- মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা (ছোট ছেলে): চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি বাবার মতো বাঁশখালীর মানুষের সেবা করতে চান এবং মনে করেন দল মনোনয়ন দিলে জনগণ তাকে বাবার উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেবে।
- জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর (বড় ছেলে): দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক।
এছাড়াও, বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন:
- ইফতেখার হোসেন মহসিন: সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা।
- মো. লেয়াকত আলী: চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও গন্ডামারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি জানান, ২০১৮ সালে জেলে থেকেই দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা সবার জানা।
- আশরাফ হোসেন রাজ্জাক: চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম জেলা পিপি ও সাবেক ছাত্রদল নেতা। তিনি বিগত ১৬ বছরে দলীয় নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে মনোনয়ন চাইছেন।
- কামরুল ইসলাম হোসাইনি: চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র।
জামায়াত ও অন্যান্য দলের প্রার্থী:জামায়াতে ইসলামী থেকে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম। দল থেকে তার মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং তিনি বাঁশখালীর মানুষকে সৎ লোককে বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব মীর এরশাদুল হকও এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টি এখনও নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়ায় আপাতত বিএনপি-জামায়াতকে নিয়েই বেশি আলোচনা চলছে।
এছাড়াও, নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা মুছা-বিন ইজহার গণসংযোগ চালাচ্ছেন এবং সম্প্রতি বাঁশখালী বড় মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত এক সভায় তাকে দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বাঁশখালী আসনে ১৯৭১ সালের পর থেকে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থীরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের শাহজাহান চৌধুরী, ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের সুলতানুল কবির চৌধুরী এবং ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির জাফরুল ইসলাম চৌধুরী জয়ী হন। এমনকি ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের জোয়ারের মধ্যেও জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বাঁশখালী থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।