স্টাফ রিপোর্টার
কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জামে মসজিদে ইমাম নিয়োগ নিয়ে উঠেছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। নিয়মিত ইমাম অবসরে যাওয়ার পর দীর্ঘদিনেও নতুন ইমাম নিয়োগ না হওয়ায়, প্রতিষ্ঠানে ইমাম নিয়োগের পরিবর্তে একজন কম্পিউটার অপারেটরকে নিয়োগ দিয়ে অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে ইমামতি — যা ধর্মীয় বিধি, প্রশাসনিক নিয়ম এবং জননিরাপত্তার দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ।
২০২২ সালের ১ অক্টোবর, মসজিদের নিয়মিত ইমাম আবু সালেহ মোঃ আব্দুল কাইয়ুম অবসরে যান। এরপর সাময়িকভাবে মোয়াজ্জিন ইমামের দায়িত্ব পালন করলেও পরবর্তী সময়ে স্থানীয় মুসল্লি ও মসজিদ কমিটি ঐক্যমতে ইমাম নিয়োগে তিনজনের নাম সুপারিশ করে।
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শঙ্খর মজুমদার, সংস্থাপন বিভাগের বিমল চন্দ্র দেবনাথ (পরিচিতি নং ৬৯৭) এবং জনসংযোগ বিভাগের তৎকালীন ডিজিএম বেলায়াত হোসেন — মোটা অংকের উৎসুখের বিনিময়ে প্রক্রিয়াটি অবৈধভাবে পাল্টে দেন। পরিণতিতে কাজি মোহাম্মদ এনামুল হক নামের ব্যাক্তিকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ইমামের দায়িত্বে বসানো হয়, যিনি ধর্মীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিংবা উপযুক্ত আলেম নন।
এটি শুধুমাত্র অনিয়ম নয়, রীতিমতো অবৈধ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন ধর্মীয় ও প্রশাসনিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সরকারি নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী, মসজিদের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে প্রার্থীর নির্ধারিত ধর্মীয় যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ এবং যাচাইপ্রক্রিয়া অতিক্রম করা বাধ্যতামূলক।
উল্লেখ্য যে মসজিদটি একটি সংরক্ষিত সরকারি অফিস এলাকার মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সীমিত, ফলে দীর্ঘদিন ধরে এ অনিয়ম আড়ালেই রয়ে গেছে। তবে এখন বিষয়টি নিয়ে মুসল্লিদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
একজন স্থানীয় মুসল্লি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা নামাজ পড়ি এই বিশ্বাসে যে, একজন প্রশিক্ষিত ইমাম নামাজ পড়াচ্ছেন। কিন্তু এখন শুনছি তিনি কম্পিউটার অপারেটর! এটা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা, এবং মসজিদের অপমান।”
বিষয়টি তদন্তযোগ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধের পর্যায়ে পড়ে বলেও মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে এ ধরনের অনিয়ম এবং অবৈধ নিয়োগ শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, বরং প্রশাসনিক দুর্নীতির জ্বলন্ত উদাহরণ।
কমনসার্ভিস জিএম আফতাব উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন “কম্পিউটার অপারেটর কিভাবে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তা সংস্থাপন বিভাগ বলতে পারে ”
প্রতিষ্ঠানটির জিএম (অ্যাডমিন) মুঠোফোনে জানিয়েছেন, “ইমাম নিয়োগের বিষয়টি পেট্রোবাংলার, আমরা চাহিদা দেব। ইমামের পদ শুন্য হওয়াতে কম্পিউটার অপারেটর ইমামতি করার যোগ্য মনে করে কিছু দিনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
স্থায়ী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং পরিস্থিতি সাময়িকভাবে সামাল দিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উচিত, অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং একজন যোগ্য ও প্রশিক্ষিত ইমাম নিয়োগ প্রদান করা।