সমতট ডেক্স:
আজ ৭ জানুয়ারি, ডামি নির্বাচনের প্রথমবার্ষিকী। গত বছর এদিনে কতিপয় সমমনা রাজনৈতিক দল ও নিজ দলের ‘ডামি’ প্রার্থীদের মাধ্যমে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার হলেও গণঅভ্যুত্থানের মুখে টিকতে পারেনি শেখ হাসিনার সরকার।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা গ্রহণের সাত মাসের মাথায় ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হতে হয় শেখ হাসিনাকে। দলের নেতাকর্মীদের ঝুঁকির মুখে ফেলে ওইদিন তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। ডামি নির্বাচনের পথ ধরে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে তথাকথিত ক্ষমতাধর আওয়ামী লীগ।
কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা পালনকারী দলটি। হত্যাযজ্ঞে জড়িত থাকার কারণে দলটির অন্যতম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ইতিমধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে।
অজ্ঞাত স্থান থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট দিয়ে বর্তমান সরকার ও সরকার সমর্থিতদের বিষোদগার করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর বাইরে দলটির সহযোগী সংগঠনের দু-চারজন কর্মী গভীর রাতে ঝটিকা মিছিল করে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার অপচেষ্টা করছে।
আওয়ামী লীগের বিগত চার টার্মের শাসনকাল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দলটি ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দখল, হত্যাকাণ্ড, অত্যাচার, নির্যাতন, বিরোধী মত দমনের মাধ্যমে সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। দলটি ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সর্বজন গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন পদ্ধতি চালু করে।
অন্য কোনো রাজনৈতিক দল যাতে ক্ষমতায় আসতে না পরে তার জন্য ২০১৪ সালের দশম, ২০১৮ সালের একাদশ ও ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। প্রতিটি নির্বাচনে তারা পতিত স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিকে ব্যবহার করেছে।
আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নিশিরাতের ভোট এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ডামি ভোটের মাধ্যমে পরপর তিনবার ক্ষমতায় আসে। তবে দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ সরকার তার মেয়াদ পার করতে পারলেও শেষ রক্ষা হয়নি দ্বাদশে। ফ্যাসিবাদের প্রতীক হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ।
অবশ্য প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগের মধ্যে ফ্যাসিবাদী আচরণ লক্ষ করা যায়। ইট মেরে মওলানা ভাসানীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া, সংসদে স্পিকার শাহেদ আলীকে চেয়ার ছুড়ে হত্যা ফ্যাসিবাদের আলোচিত ঘটনা। এ ছাড়া ৭২-৭৫ শাসনে ফ্যাসিবাদের জ্বলন্ত প্রমাণ ছিল আওয়ামী লীগ।
গত বছর ৫ জানুয়ারি দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগের দুটির ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকারের এক তরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখে তা বয়কট করেছিল বিএনপি, জামায়াতসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। প্রতিপক্ষবিহীন নির্বাচনকে জমজমাট করতে অভিনব ‘কৌশল’ নেয় দলটি।
নির্বাচনে সমমনা জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাকের পার্টি, বিকল্পধারা, কল্যাণ পার্টি, তরিকত ফেডারেশনসহ ১৪ দল থেকে সমঝোতার মাধ্যমে আলাদা প্রার্থী মাঠে নামায় আওয়ামী লীগ। এর বাইরে বিভিন্ন এজেন্সির সহায়তায় কয়েকটি কিংস পার্টিকে নিবন্ধন দিয়ে তাদেরও ভোটের মাঠে যুক্ত করে।
একই সঙ্গে নৌকা প্রতীকে নিজ দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করায় দলটি। নিজেদের প্রতিপক্ষ নিজেরাই, নির্বাচনে নজিরবিহীন এবং অভিনব এসব প্রার্থীদের নাম শেখ হাসিনা নিজেই রাখেন ‘ডামি প্রার্থী’। অতীতে নিজ দলীয় বিরোধী প্রার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর হলেও এবার উল্টো প্রার্থী হতে তাদের উৎসাহিত করা হয়।
তবে এত সব কৌশলের পরও নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। নির্বাচনোত্তর সংবাদ সম্মেলনে ২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল উল্লেখ করেন। তবে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম সে সময় পাশ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলে দেন।
পরে ইসির আনুষ্ঠানিক তথ্যেও ৪১ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানানো হয়। বিয়য়টি নিয়ে পরে নানা বিতর্ক তৈরি হয়। নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ব্যতিক্রমী ঘটনা হয়ে ওঠে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অতীতের সব সংসদ নির্বাচনের রেকর্ড ভেঙে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করেন। স্বতন্ত্রদের মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
নির্বাচনের চার দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। দশম ও একাদশের শাসনামলে মন্ত্রিসভায় বিরোধী দল ও সমমনাদের স্থান দিলেও দ্বাদশে কাউকে নেওয়া হয়নি।
নির্বাচনি ময়দানে আওয়ামী লীগের মিত্র দল এবং নিজ দলের নেতাকর্মীদের পরস্পরের বিরুদ্ধে ‘ডামি প্রার্থী’ বানিয়ে ‘ডামি নির্বাচনের’ তরী পার হয়ে টানা চার মেয়াদের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলেও শেষ পর্যন্ত গদি রক্ষা করতে পারেননি শেখ হাসিনা। আগের দুটি সরকারের ধারাবাহিকতায় এবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এলেও ক্ষমতা স্থায়ী হয়নি।
ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র সাত মাসের মাথায় ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে তীব্র জনরোষে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।
অবশ্য জানুয়ারিতে সরকার গঠনের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারকে কোনো রকম ঝক্কিঝামেলায় পড়তে হয়নি। এ সময়ে দেশে বড় ধরনের কোনো আন্দোলনও হয়নি।
এদিকে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি আত্মগোপনে চলে যান। নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন দখল করে ছাত্র-জনতা। বিক্ষুব্ধ জনতা ভেঙে ফেলে আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের প্রধান কার্যালয়, ধানমন্ডির দলীয় প্রধানের কার্যালয় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িটিও। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়। রাজধানীর বাইরেও দলের কার্যালয় পুড়িয়ে ফেলা হয়। দলটির অনেক নেতাকর্মী জনরোষের শিকার হন।
শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর দলের কয়েকজন নেতা জীবন বাঁচাতে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন। কেউ কেউ সীমানা পার হয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে যান। বিমানবন্দর দিয়েও কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি দেন। দলের বেশ কয়েকজন নেতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। এখনও যারা আত্মগোপনে রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান চলমান রয়েছে। আত্মগোপনে থাকা অনেকে বিভিন্নভাবে দেশত্যাগের চেষ্টাও করছেন।
দেশত্যাগের পর ১৫ আগস্ট ঢাকার আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ২১৩টি হত্যামামলাসহ ২৫০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা ছাড়াও এসব মামলায় দলটির এমপি-মন্ত্রী, নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রশাসনের অনেককে আসামি করা হয়। মামলাগুলোতে গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছোড়ার অভিযোগ আনা হয়।
এছাড়াও গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তার দলের অনেকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম দৃশ্যমান নেই। অনেকটাই আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে গেছে দলটি। বিদেশে অবস্থানকারী কয়েকজন নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টকশোতে অংশগ্রহণ এবং দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে মাঝেমধ্যে দু-একটি বিবৃতির মধ্যে দলটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির ‘দাবিদার’ এ দলটির ই-মেইল অ্যাড্রেসটিও নিষ্ক্রিয় রয়েছে। দলটির ওয়েবসাইটে ১ আগস্টের পর থেকে কোনো তথ্য আপলোড করা হচ্ছে না। এদিকে ভারতে অবস্থানকারী দলটির প্রধান শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অবস্থানকারী নেতাকর্মীদের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ১০ নভেম্বর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে গিয়ে নূর হোসেন দিবস পালনের আহ্বান জানালেও দুটি কর্মসূচিই ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে দিবসকেন্দ্রিক কিছু কর্মসূচিতে ফুল দিয়ে দ্রুত সটকে পড়ছেন। কখনও কখনও গভীর রাতে ঝটিকা মিছিল করে সোশ্যাল মিডিয়াতে তার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছে।
টানা চারবারের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থান মূল্যায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া আমার দেশকে বলেন, আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে সেটা আমার কাছে প্রত্যাশিতই ছিল বলে আমি মনে করি। এভাবে অত্যাচার-নির্যাতন ও জুলুম করে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগও পারেনি।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি প্রশ্নে পঁচাত্তর ও চব্বিশের প্রত্যক্ষদর্শী শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, তাদের যে পরিণতি হওয়ার সেটা হয়েছে। শিগগিরই তাদের রাজনীতিতে ফেরার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের এক সময়কার সঙ্গী জাসদ নেতা শরীফ আম্বিয়া বলেন, আওয়ামী লীগকে নিজেদের মূল্যায়ন করতে দেওয়া উচিত। তাদের আত্মমূল্যায়ন করা উচিত।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আওয়ামী লীগ ভুয়া নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, খুন করে যে ক্ষমতায় থাকা যায় না তারা ভুলে গিয়েছিল।
আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে যে গণঅভ্যুত্থানের কথা বলে আসছি। ফ্যাসিবাদ উৎখাতের যে জমিন আগেই তৈরি হয়েছিল তার সফল পরিণতি হয়েছে ছাত্র-জনতার হাত ধরে। এ পতন কেবল আওয়ামী লীগ নয়, আমাদের সব রাজনীতিকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত উল্লেখ করে এই বাম রাজনীতিক বলেন, একটি পুরো দল হিসেবে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে আওয়ামী লীগের যে ভূমিকা ছিল সেটাকে ম্লান করে দলটি এখন ফ্যাসিস্ট দলে পরিণত হয়েছে। একটি পরিবার বিশেষ করে শেখ হাসিনা এ দলটিকে ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে।
তবে অবাক বিষয় হচ্ছে, দলটির মধ্যে এখনও ন্যূনতম কোনো অনুশোচনা বা অনুতাপ দেখছি না। আমরা মনে করি, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতারা- যারা হত্যা-খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হবে। আর দেশের জনগণ ঠিক করবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্বাচনকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা নতুন নয়। এর আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শেখ হাসিনার সরকারও ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করেন। এর ধারাবাহিকতায় কারচুপির মাধ্যমে ২০১৮ সালে রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালের ডামি ভোট শেখ হাসিনার ওই কর্তৃত্ববাদ ফ্যাসিবাদে রূপ নিয়েছে।
২০১৪ সালের কর্তৃত্ববাদী নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যর্থতার কারণেই এ ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ফ্যাসিবাদীদের কাছে জনগণের কোনো আপিল বা প্রত্যাশা থাকে না। আর এ কারণেই তারা জনগণ থেকে দূরে সরে যায়। জনগণ থেকে দূরে সরে গেলে তাদের ফিরে আসাটাও হয় সুদূর। সেটা ঘটেছে আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে। কাজেই আমি মনে করি না আওয়ামী লীগ শিগগিরই এ দেশের রাজনীতিতে সহজতর হবে।
ফ্যাসিবাদের দায় কেবল আওয়ামী লীগের নয় জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে বিগত তিনটি নির্বাচন যে সামান্যতম গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল সেটা সম্ভব হতো না এর সঙ্গে জাতীয় পার্টি যুক্ত না হলে। কাজেই জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের অন্য শরিকরা এর দায় কোনোভাবে এড়াতে পারে না।
বিগত তিনটি নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্টদের বিচারের মুখোমুখি করা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোট রক্ষার শপথ নিয়ে সেটা না করে সরকারকে সুরক্ষা দিয়েছে। এটা করে তারা শপথ ভঙ্গ করেছে। এজন্য তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করা দরকার।