সমতট ডেক্স: পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টাও এখন পদবঞ্চিতদের তালিকায়। গত ১৮ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে পদবঞ্চিত বিবেচনায় ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র ক্যাডারের পাঁচ কর্মকর্তার নামের একটি তালিকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকার চার নম্বরে রয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মাজেদা রফিকুন নেছা। পদোন্নতির সুপারিশে তার নাম আসায় রীতিমতো বিস্ময় তৈরি হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে। ২০১৭ সালে অবসরে যাওয়ার পর সাবেক এই রাষ্ট্রদূত আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে থাকেন এবং ২০২০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রদূত মাজেদা রফিকুন নেছাকে তার উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। শেখ হাসিনার পতনের আগ পর্যন্ত তিনি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ‘আমরা শুধু রাষ্ট্রদূত মাজেদা রফিকুন নেছার আবেদনপত্রটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ই বিষয়টি বিবেচনা করবে।’
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ওই প্রজ্ঞাপনে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত যেসব কর্মকর্তা অন্যায়ভাবে পদবঞ্চিত হয়েছেন, তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির জন্য আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
ওই প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. খায়রুজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হাসিব আজিজ, সাবেক রাষ্ট্রদূত মাজেদা রফিকুন নেছা এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত আশরাফ উদ্দিনকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে চাকরিতে বঞ্চনার শিকার এবং উল্লিখিত সময়ে অবসরে যাওয়া বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত বঞ্চিত পাঁচ কর্মকর্তার স্বব্যাখ্যার আবেদনপত্রগুলো পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলো।
ওই চিঠির সংযুক্তিতে নিজেকে বঞ্চিত দাবি করা চার কর্মকর্তা বঞ্চিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিলেও রাষ্ট্রদূত মাজেদা রফিকুন নেছা সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করেননি।
ছকবাঁধা আবেদনপত্রের ২০ নম্বর ছকে বঞ্চনার কারণ উল্লেখ করার কথা রয়েছে। ওই ছকে তিনি লিখেছেনÑ ‘বিস্তারিত কারণ জানা নেই’। তবে রাষ্ট্রদূত থাকাকালে ক্ষমতাসীন দলের অন্যায় নির্দেশ পালন করতে অনীহা প্রকাশ করাই অন্যতম কারণ। সে কারণে মেয়াদপূর্তির আগে আমাকে ফিরে আসতে বাধ্য করা হয় এবং আসার পর মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। মামলায় জয়লাভ করার পরও আমার নাম পদোন্নতির জন্য পাঠানো হয়নি এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে পোস্টিংও দেওয়া হয়নি। সবদিক থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মাজেদা রফিকুন নেছাকে ফিলিপাইনে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর্থিক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ২০১২ সালের ১৫ জুলাই রাষ্ট্রদূত মাজেদা রফিকুন নেছাকে ম্যানিলা থেকে ঢাকায় প্রত্যাহার করা হয়।
এরপর ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ নিজের স্বামী, মেয়ে এবং বোনকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলা করে।
২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি আলোচিত এই রাষ্ট্রদূত অবসরে যান এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ২০২০ সালে তাকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ওই পদে বহাল ছিলেন। বিস্ময়করভাবে তিনিই এখন নিজেকে দাবি করছেন ‘বঞ্চিত’ হিসেবে।
শেখ হাসিনার উপদেষ্টার নাম কীভাবে বঞ্চিতদের তালিকায় আসে এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট মুখপাত্র আমার দেশকে বলেন, ‘এখানে আসলে আমাদের তেমন কিছু করার ছিল না। যারাই নিজেকে বঞ্চিত হিসেবে দাবি করে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন, আমরা প্রতিটি আবেদনপত্র তাদের সপক্ষে দেওয়া ব্যাখ্যাসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমরা আসলে সুনির্দিষ্ট কোনো সুপারিশ করিনি, যা কিছু করার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় করবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গঠিত একটি বিশেষ কমিটি প্রতিটি আবেদপত্র যাচাই-বাছাই করবে। তারাই ঠিক করবে কে সত্যিকার অর্থে বঞ্চিত, আর কে বঞ্চিত নন।