সমতট টিভি ডেস্ক: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক সংগঠনগুলো তাদের দাবির পক্ষে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান, বিক্ষোভ, সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের বাধা ও হামলার শিকার হচ্ছেন তারা। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। রোজার ছুটি শুরুর আগে এই আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে।
শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও নেমেছে আন্দোলনে। নারী নির্যাতন, ছাত্রী নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে, নির্যাতনের ঘটনায় দায়ী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেছেন, “একটি পক্ষ দেশকে অস্থিতিশীল করতে আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। তারা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। মঙ্গলবার সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রার সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়, এতে সংঘর্ষ হয় এবং কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। পুলিশ তিনজন শিক্ষককে আটক করলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
সংগঠনের সদস্য সচিব প্রিন্সিপাল দেলাওয়ার হোসেন আজীজী জানিয়েছেন, “দাবি আদায় না হলে রমজানেও অবস্থান কর্মসূচি চলবে এবং ঈদের নামাজ যমুনার সামনে আদায় করা হবে। সরকার আলোচনার পর আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, তাই আন্দোলন চলবে।”
এর আগে শিক্ষকরা শতভাগ উৎসবভাতা, সরকারি কর্মচারীদের মতো বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার দাবিতে প্রতীকী অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ এবং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, সরকারি স্বীকৃতি না পাওয়ায় তারা ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
শিক্ষকদের আন্দোলনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাত্রী নির্যাতনকারী শিক্ষকদের অপসারণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে। বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরাও চানখারপুল এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে। তারা ধর্ষণে অভিযুক্তদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।
রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকায় মঙ্গলবার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে অবস্থান নেয়। একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে তারা আন্দোলনে যোগ দেয়। শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা দাবি জানিয়ে আসছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দাবি মানা না হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করবেন।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। যৌক্তিক দাবির পাশাপাশি কিছু মহল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই আন্দোলনকে উসকানি দিচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। তবে শিক্ষা ও নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।