সমতট ডেস্ক: পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ প্রাচীন বাঙালির গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। এই দিনে ভালো খাওয়া, ভালো থাকা ও ভালো পরতে পারাকে মানুষ মঙ্গলজনক মনে করত। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এই দিনকে সামনে রেখে মানুষ ব্যবহার্য জিনিসপত্র ধোয়ামোছা করে, ঘর সাজিয়ে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী ভালো খাবারের আয়োজন করত।
ভালো খাবার বলতে মাছ-মাংস, গরম ভাত, সুগন্ধি ভাত। অঞ্চলভেদে খাবারে ভিন্নতা থাকলেও একটা বিশ্বাস সবার মাঝে ছিল যে, বছরের প্রথম দিন খারাপ খাবার খেলে সারাবছর খারাপ খাবার খেতে হবে। এ বিশ্বাস থেকেই পহেলা বৈশাখে বাসি কিছু না খাবার নিয়ম। বাড়ির বউ-ঝিরা তাই আয়োজন করে এদিন নানান পদের রান্না করেন। এসব রান্নার পেছনেও রয়েছে নানান যুক্তি, নানান ধারণা। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, বৈশাখে তিতা খেলে রোগবালাই হয় না।
এ বিশ্বাসে তিতা শাক যেমন– পাট, গিমা, মেথি কিংবা তিতা করলা ভাজি বা মাছ দিয়ে পাতলা ঝোল বা নানান পদের সবজি দিয়ে শুক্তো রান্না করে খেয়ে থাকেন। কোনো কোনো অঞ্চলের মানুষ টক জাতীয় ফল দিয়ে অম্বল বা খাট্টা রান্না করে থাকেন। আবার কোনো অঞ্চলের মানুষ নানা রকমের ভর্তা, মাছ ভাজা, সবজিকে প্রাধান্য দেন। মূলত বৈশাখের তীব্র তাপদাহে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য হালকা মসলাযুক্ত ঝোল জাতীয় খাবারের প্রচলন। এ ছাড়া গ্রামগঞ্জের বৈশাখী মেলায় দই-মিষ্টি, বিন্নি ধানের খই, সন্দেশ, মুড়ি-মুড়কি, নারকেলের নাড়ু, গরম জিলাপি, নকুলদানা, গজা, বাতাসা ইত্যাদি কেনাবেচা হয়।
কালের পরিক্রমায় শহুরে জীবনেও এই সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করেছে, যা আজ ‘পান্তা ইলিশ’ সংস্কৃতি নামে পরিচিত। যদিও গ্রামবাংলার বৈশাখী সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে না এই শহুরে সংস্কৃতি। সে যা-ই হোক, কোনো সন্দেহ নেই যে পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব। পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশে জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সাড়ম্বরে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। তাই বৈশাখ আমাদের কাছে অনন্য অনুভূতি, আবেগের জায়গা।
বিষয় : রান্না পহেলা বৈশাখ ১৪৩২