সমতট ডেস্ক ।।
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী (MCQ) পদ্ধতি বাতিলের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই’ শীর্ষক সভায় এই সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের দীর্ঘ সুপারিশপত্রে শুধুমাত্র ভর্তি পরীক্ষা নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, শিক্ষক নিয়োগ, সিলেবাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে আসন বরাদ্দ করা, এবং পরে মেধা ও চাহিদার ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা।
শিক্ষক নেটওয়ার্ক আরও প্রস্তাব করে যে, স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রতিটি ক্লাসে ৪০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের তিনটি ভাষা শেখার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের জন্য আলাদা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গবেষণানির্ভর শিক্ষার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করে শিক্ষকরা বলেন, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ঢালাওভাবে সুযোগ না দিয়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সুযোগ সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। সেইসাথে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণকালীন পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার সুপারিশও করা হয়, যাতে প্রতি বছর অনুষদের সক্ষমতার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ১০০ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিদেশে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গ্রহণের জন্য বিদ্যমান সরকারি তহবিল বাতিল করে, সেই তহবিল দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্পন্ন গবেষণার জন্য ব্যয় করার পরামর্শও দেন শিক্ষকরা।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংকট সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে শিক্ষকরা সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব এবং ইউজিসির কৌশলপত্রে মেধাবীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম প্রমুখ।
এই সুপারিশগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।