সমতট ডেস্ক: সপ্তাহের ব্যবধানে পর পর দুবার আলোচনার টেবিলে দরকষাকষি করেছেন মার্কিন ও ইরানি কর্মকর্তারা। ওমানের পর ইতালির রাজধানী রোমে শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসেন। সেই আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে বলেই মনে করছেন ইরানি কর্মকর্তারা। পরমাণু কর্মসূচির আলোচনা নিয়ে তেহরানের এই নরম সুর দুপক্ষের শীতল সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির বরাত দিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা প্রেস টিভি জানিয়েছে, তেহরান-ওয়াশিংটনের পরমাণু মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। ওই বৈঠককে ইতিবাচক বলেও মন্তব্য করেছেন আরাকচি।
অবশ্য রোমে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগে মস্কো সফর করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। মূলত ইরান ও আমেরিকার মধ্যে পরমাণু আলোচনার বিষয়ে সেখানে কথা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, সেই বৈঠক থেকে হয়তো কৌশলী কোনো বার্তা পেয়েছেন তিনি, তাই দ্বিতীয় দফার বৈঠক নিয়ে আশার বাণী শোনাচ্ছেন আরাকচি।
দ্বিতীয় দফার আলোচনা কোথায় হবে, তা নিয়ে পুরো সপ্তাহ চলে নাটকীয়তা। একবার শোনা যায় আলোচনা ওমানেই হচ্ছে। আবার শোনা যায়, রোমে বসবেন ট্রাম্প-খামেনির প্রতিনিধিরা। শেষ পর্যন্ত শনিবার রোমেই অনুষ্ঠিত হয় উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠক। সেখানে আরাকচি মার্কিন কর্মকর্তাদের জানান, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্তে নিজেদের পরমাণু কর্মসূচি কিছুটা সীমিত করতেও তেহরানের আপত্তি নেই।
চার ঘণ্টা ধরে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে দরকষাকষি করেন আরাকচি। অবশ্য তাদের এই আলোচনা প্রথম দফার মতো এবারও হয়েছে পরোক্ষ। একজন ওমানি কর্মকর্তার মাধ্যমে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন দুই কর্মকর্তা। আরাকচিকে অনেকটা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছেন খামেনি। অর্থাৎ পরমাণু ইস্যুতে আলোচনায় খামেনির হয়ে সব সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন আরাকচি। তাই মাত্র দু’বার বসার পরই স্পর্শকাতর এই ইস্যুতে বড় অগ্রগতি এসেছে।
এখন সম্ভাব্য একটি পরমাণু চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র সম্মত হয়েছে। আরাকচি জানান, আগামী ২৬ এপ্রিল ফের আলোচনায় বসবেন তিনি ও উইটকফ। তবে তাদের আলোচনার আগেই বুধবার ওমানে বিশেষজ্ঞরা বৈঠক করবেন। ওয়াশিংটনের সঙ্গে এই পরমাণু আলোচনায় ইরান ভালো অবস্থানে থাকবে বলেও বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের জানান উচ্ছ্বসিত আরাকচি।
২০১৫ সালে ছয় জাতির সঙ্গে ইরানের একটি পরমাণু চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু নিজের প্রথম মেয়াদেই ২০১৮ সালে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে এককভাবে বের করে আনেন ট্রাম্প। তখন হুমকি-ধামকি দিয়ে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার নতুন বোঝাও চাপিয়ে দেন। এবারও ক্ষমতায় বসে ইরানকে টার্গেট করেছেন ট্রাম্প। পরমাণু চুক্তিতে রাজি করাতে সামরিক হামলার হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তেহরানের ওপর দিয়েছেন আরও নিষেধাজ্ঞা।
ইরানযুক্তরাষ্ট্রপরমাণু কর্মসূচিখামেনিট্রাম্প