আলমগীর মোহাম্মদ : ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ঔপন্যাসিক, শিশু সাহিত্যিক, কবি ও সৃজনশীল লেখালিখি বিষয়ের অধ্যাপক হান ক্যাং। হান ক্যাং এশিয়ার প্রথম নারী লেখক যিনি সাহিত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পুরস্কার লাভ করেন। কোরিয়ার অন্যতম দৈনিক দ্য কোরিয়া টাইমসে প্রকাশিত ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী হান ক্যাং কে?- লেখাটি বাংলায় তর্জমা করেছেন অনুবাদক ও শিক্ষক আলমগীর মোহাম্মদ।
২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী হান ক্যাং কে?
কোরিয়ার ইতিহাসে সাহিত্যে প্রথম নোবেলজয়ী হান ক্যাং ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। গোয়ানজু শহরে। ঔপন্যাসিক হ্যান সিইউং-ওন তার বাবা। ইয়ুন্সি ইউনিভার্সিটি থেকে ক্যাং কোরিয়ান ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৯৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে হান ক্যাং কবি হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ‘লিটারেচার অ্যান্ড সোসাইটি’ নামের একটি পাক্ষিক ম্যাগাজিনের শীতকালীন সংখ্যায় চারটি কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তার সাহিত্যযাত্রা শুরু হয়। সে সময় তিনি একটি সাংস্কৃতিক ম্যাগাজিনে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন।
পরবর্তী বছর হান কাং কোরিয়ার সাহিত্যে ঔপন্যাসিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ‘রেড এংকর’ নামে তার একটি ছোটগল্প লিখে সিইউল শীনমুন পত্রিকা আয়োজিত সাহিত্য প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করে।
“দ্য ফ্রুট অব মাই উইম্যান” , “ ইউর কোল্ড হ্যান্ডস” , “ব্ল্যাক ডিয়ার” , “দ্য উইন্ড ইজ ব্লোয়িং” এবং “গ্রিক লেসন্স” প্রভৃতি উপন্যাস প্রকাশের মাধ্যমে পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে তিনি কোরিয়ান সাহিত্যের অন্যতম লেখক হিসেবে নিজে তুলে ধরেন। উপন্যাস ছাড়াও ক্যাং শিশু সাহিত্য ও কবিতা লেখায় আত্মনিয়োগ করেন। “আই পুট দ্য ইভনিং ইন দ্য ড্রয়ার” নামের একটি কাব্যগ্রন্থ ও “মাই নেইম ইজ সানফ্লাওয়ার” ও “টিয়ার বাক্স” নামে দুটি শিশুসাহিত্যেরও রচয়িতা তিনি।
“দ্য ভেজিটেরিয়ান” উপন্যাসের জন্য হান ক্যাং ২০১৬ সালে ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার লাভ করেন। এই প্রাপ্তি তাকে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দেয়। “ক্রিয়েশান ও ক্রিটিসিজম” নামক একটি পাক্ষিক পত্রিকায় এই উপন্যাসটি ২০০৪ সালে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ২০০৭ সালে এটি কোরিয়ায় বই আকারে প্রকাশ হয়।
সিউল ইনস্টিটিউট অব আর্টসে তিনি উঠতি লেখকদের ২০০৭-২০১৮ সময়কালে ফিকশন লেখার কলাকৌশল পড়ান। শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত প্রশংসিত এই লেখক সম্পর্কে বলা হয় ‘ তিনি এমন একজন অধ্যাপক যিনি সংবেদনশীলতা ও ব্যক্তিত্বের নৈপুণ্যে শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করেন’।
হান ক্যাং তার সাহিত্যিক পরিবারের জন্যও খ্যাত। সিইউং-উন, কোরিয়ার সাহিত্যের অন্যতম উপন্যাসিক, তার বাবা। সিইউং বর্তমানে পঁচাশি বছর বয়সেও লেখালিখি করেন। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো “ছুসা” ও “দ্য লাইফ অভ দাসান” । এই বছরের শুরুতে তিনি “দ্য পাথ অভ হিউম্যান্স” নামে একটি আত্মজৈবনিক উপন্যাস প্রকাশ করেছেন। প্রথম বাবা ও কন্যা জুটি হিসেবে এই উপন্যাসিকদ্বয় কোরিয়ার বিখ্যাত ইয়াই স্যাঙ সাহিত্য পুরষ্কার লাভ করে দেশজুড়ে অনেক খ্যাতি অর্জন করেছেন। হান ক্যাং-এর বড় ভাই হান ডং-রিমও একজন উপন্যাসিক।
হান ক্যাং-এর সম্প্রতি প্রকাশিত উপন্যাস “উই ডো নট পার্ট” (২০২১) কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ জেজ্যুতে ১৯৪৮ সালে সংগঠিত বেসামরিক গণহত্যার করুণ চিত্র তুলে ধরে। এই উপন্যাসের জন্য তিনি গত বছর ফ্রান্সের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য পুরস্কার প্রিক্স মেডিসিস লাভ করেন এবং এই বছরের মার্চে এশিয়ান সাহিত্যে আরেকটি ফরাসি পুরস্কার এমিল গ্যুমে লাভ করেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে হান ক্যাং বলেছিলেন, উই ডো নট পার্ট (২০২১ উপন্যাসটি শেষ করতে তার সাত বছর লেগেছিল। তিনি বলেন, ‘এই উপন্যাসটি শেষ করতে পারা ছিল আমার জীবনে অন্যতম আনন্দের মুহূর্ত‘। যেহেতু তার সাম্প্রতিক দুটো উপন্যাস “হিউম্যান অ্যাক্টস” ও “উই ডোন্ট পার্ট” আধুনিক কোরিয়ার ইতিহাসের অন্ধকারতম দিক ও যাতনা নিয়ে রচিত, হান আরো বলেন, তিনি ঘুরে দাঁড়াতে চান এবং সামনের দিনগুলোতে ইতিবাচক ও আনন্দদায়ক কিছু গল্প নিয়ে হাজির হতে চান পাঠকের দরবারে। “ঠাণ্ডায় ভোগার যথেষ্ট অনুভূতি আমি লাভ করেছি উই ডো নট পার্ট-এর মাধ্যমে। আমি চাইব এবার বসন্ত আসুক” তিনি আরও যোগ করেন।
সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা।