ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে আসামি ধরতে গিয়ে নারীর কপালে পিস্তল ঠেকানোসহ হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় নগদ টাকাসহ স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
শনিবার এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারীর মাথায় পিস্তল তাক করে আছেন ডিবির এক কর্মকর্তা। এ নিয়ে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে সদর উপজেলার থলিয়ারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের থলিয়ারা গ্রামের সৌদি প্রবাসী নূরুল আলম নূরুর বিরুদ্ধে মাসখানেক আগে ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ আত্মসাতের মামলা হয়। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, নূরুল আলম সৌদি আরব থেকে আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির স্বর্ণ এনে পুরোটা বুঝিয়ে দেননি।
এ ঘটনায় আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে এনামুল হক বাদী হয়ে মামলা করেন। গত শুক্রবার বিকেল ৫টার নূরুল আলমকে গ্রেপ্তারের জন্য সাদা পোশাকে তার বাড়িতে যান জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রেজাউল করিমসহ আরও কয়েকজন। এ সময় নূরুল আলমের বাড়িতে তার ভাতিজার সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠান চলছিল।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে একদল লোক নূরুল আলমকে খুঁজতে আসে। কিন্তু নূরুলকে না পেয়ে তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এ সময় বাড়িতে উপস্থিত নারীসহ অন্যদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। তারা নূরুল আলমের স্ত্রী, সন্তান, বাবাসহ পরিবারের লোকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। একপর্যায়ে এসআই রেজাউল প্রবাসীর স্ত্রী বন্যার কপালে প্রকাশ্যে পিস্তল তাক করেন। ঠিক তখন পুলিশের অন্য সদস্যরা ঘরে থাকা নগদ টাকাসহ স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেন।
ঘটনার সময় উপস্থিত নূরুল আলমের ভাই সারোয়ার আলম জানান, সাদা পোশাকে আসা লোকজন বাড়িতে প্রবেশ করেই তার ভাইকে খুঁজতে শুরু করে। ভাই বাড়িতে নেই বললেও তারা মানতে রাজি হননি। এ সময় সাদা পোশাকে আসা লোকজন নূরুল আলমের স্ত্রী বন্যা বেগমসহ কয়েকজনকে মারধর করেন।
তিনি বলেন, আমার ভাইকে ধরতে হলে কেন বাড়িতে এভাবে হামলা করা হবে। বিষয়টি আমরা থানা পুলিশকে জানিয়েছি। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করব।
সারোয়ার আলমের অভিযোগ, তার ভাইয়ের খোঁজে সাদা পোশাকে আসা লোকজন পিস্তল তাক করার পাশাপাশি গুলিও ছুঁড়েছে। তাদের কাছে গুলির খোসাও রয়েছে।
নূরুল আলমের স্ত্রী বন্যার অভিযোগ, প্রবাসে আব্দুল কুদ্দুসকে ব্যবসায়িক অংশীদার না করায় তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন আমাদের বাড়িতে সুন্নতে খাৎনার অনুষ্ঠান চলছিল। এ সময় ৫-৬ জন সাদা পোশাকে এসে ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছ থেকে আলমারির চাবি নেয়। তারা তল্লাশি করে কিছু পায়নি। কিন্তু আমাদের ঘরে থাকা প্রায় ৫ লাখ টাকাসহ গলায় থাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি দেখে চিৎকার করায় শিশু নিশাতের মাথায় বন্দুক দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়। প্রতিবাদ করায় তারা আমার কপালে পিস্তল ঠেকায় এবং ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের এসআই রেজাউল করিম বলেন, বাদী পক্ষ বিষয়টি আমাদের জানালে প্রথমে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোফাজ্জল আলী একজন কনস্টেবল নিয়ে ওই বাড়িতে যান। এর কিছুক্ষণ পর আমি যাই। আমি যাওয়ার পর তারা খারাপ আচরণ করে। এমনকি আসামিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়।
পিস্তল তাক করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার হাতে পিস্তল ছিল। তবে তা কারো দিকে তাক করিনি। কাউকে মারধর করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল, আসামিকে ধরা। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করেছি। এ কারণে আমরা কোনো অ্যাকশনে যাইনি।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। যারা প্রবাসীর বাড়ি গিয়েছিল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তদন্ত কাজ শেষ হলে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কোনো অফিসার যদি আসামি ধরতে গিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।