সমতট ডেস্ক: গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুই আওয়ামী লীগ নেতা ও তৎকালীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুদকের জেলা কার্যালয়ে এ মামলা করেন জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন হোসেন।
মামলার আসামিরা হলেন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও টুঙ্গিপাড়া ডুমুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলী আহম্মেদ শেখ (৭২), একই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার আওয়ামী লীগ নেতা কবির তালুকদার (৫৪) এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম (৩৫)।
জানা গেছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বরাদ্দে ডুমুরিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আলী আহম্মেদ শেখ চর গোপালপুর ওয়াপদা রাস্তা থেকে পাতিলঝাপা রাস্তার অনন্ত বৈদ্যের বাড়ি হয়ে ভেন্নাবাড়ি পর্যন্ত ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার ৩ কিলোমিটার মাটির রাস্তার কাজ করেন। তিন কিলোমিটার রাস্তার কাজে সিডিউল বহির্ভূত ভাবে দুপাশে ৩৮টি বল্লি (গাছের খুঁটি) ও ২০ খানা ব্যারেলের টিনশেড ব্যবহার করা হয়েছে। বাকিগুলো বাশ ও কুঞ্চি দ্বারা প্যালাসাইডিং করায় দেবে গিয়ে রাস্তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পাশাপাশি রাস্তার উচ্চতা ও ব্যাসার্ধ কম করা হয়। তিন কিলোমিটার রাস্তায় কোন ব্রিজ বা কালভার্ট না থাকায় পাসের কৃষি জমি অনাবাদি হয়েছে এবং পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। কাজের বিনিময় খাদ্যকর্মসূচির আওতায় কাজ হলেও প্রকল্প কমিটির লোকজন ড্রেসিং করে বালি ফেলায় শ্রমিকগণ কাজ থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং রাস্তার কাজে অবৈধ আত্মঘাতী ড্রেজার দিয়ে ফসলি জমি কেটে বালুভরাট করায় কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রকল্প কমিটি ও ইউপি চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ বরাদ্দকৃত ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার যথাযথ ব্যয় না করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
অন্যদিকে একই উপজেলার পাকুড়তিয়া পান্না শেখের বাড়ি হতে ছোট ডুমুরিয়া দেবেন্দ্রনাথ মন্ডল এর বাড়ির নিকট এইচবিবি রোড মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিং এ কাজ সিপিসি নিযুক্ত হন ডুমুরিয়া ইউপি ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা কবির তালুকদার। কাজে অনিয়মের অভিযোগ এনে ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রাবেয়া আক্তার দুদকে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে যায় ২৮জানুয়ারী জেলা দুদক টিম। ছোট ডুমুরিয়া দেবেন্দ্রনাথ মন্ডল এর বাড়ি হতে পাকুড়তিয়া পান্না শেখের বাড়ির নিকট এইচবিবি রোড মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যারাসাইডিং করনে ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকার কাজে সিডিউল বহির্ভুতভাবে রাস্তার উচ্চতা ও ব্যাসার্ধ কমিয়ে নামমাত্র রাস্তাটি বালু দিয়ে নির্মাণ করার সত্যতা পায়। রাস্তাটি পান্না শেখের বাড়ি পর্যন্ত করার কথা থাকলেও পরে সেটিকে করফা খাল পর্যন্ত রাস্তার কাজ করেন। এ রাস্তাটি এখন এলাকাবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। দায়সারা ভাবে রাস্তাটি নির্মাণ করায় এলাকাবাসীর যাতায়াতে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা রাস্তায় পায়ে হেঁটে যাবারও সুযোগ নেই। এছাড়াও পাকুড়তিয়া উত্তরপাড়া ৭৬ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ উন্নয়নে ৬ লাখ এবং পাকুড়তিয়া পার ঝনঝনিয়া আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় খেলার মাঠ উন্নয়নে ২ লাখ টাকার কাজ সমূহ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করে নামমাত্র বালু ভরাট করে সংশ্লিষ্ট মাস্টারোলে অভিযোগকারী রাবেয়া আক্তারের স্বাক্ষর না নিয়ে উক্ত কাজের সমস্ত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্ট সিপিসি ইউপি মেম্বার কবির তালুকদার।
গোপালগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, আসামিগণ অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ না করে ভুয়া মাস্টাররোল প্রস্তুত পূর্বক দাখিল করে ক্ষমতার অপব্যবহার করত: অর্থ উত্তোলন করে দন্ডবিধি ১৮৬০ -এর ৪২০/ ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।