সমতট ডেক্স : ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তার বোন শেখ রেহানা ও তার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে তথ্য সরবরাহ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গোপনীয়তা রক্ষা করে স্পর্শকাতর এই ইস্যুটির তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, দু’বোনের কেউই পিতা-মাতার নামের আগে জাতির পিতা ও বঙ্গমাতা উল্লেখ করেননি। পিতার নামে আগে ‘বঙ্গবন্ধু’ লেখা আছে। শেখ হাসিনার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর লেখা থাকলেও তার বোন রেহানার শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন তথ্য উল্লেখ করেননি। অপরদিকে, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ ব্রিটিশ এমপি হলেও জন্মসূত্রে ঢাকা দেখিয়ে নিয়েছেন জাতীয় পরিচয়পত্র। খবর ইসি ও দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
নথির তথ্য বলছে, গত ১৯ ডিসেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন (অনুসন্ধান টিমের দলনেতা) নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদকে এড্রেস করে একটি পত্র পাঠান। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের স্মারক নং-০০.০১.০০০০.৫০২.০১.০৫০.২৪ এবং ই/আর নং-১৭৯/২৪ (বিশেষ তদন্ত)। চিঠির শিরোনামে অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র সরবরাহ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট-আত্নসাত সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ দুদকে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের তথ্যাদি ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ সাপেক্ষে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যাদি, রেকর্ডপত্র ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সত্যায়িত ফটোকপি দরকার। চিঠিতে চাওয়া তথ্যসমূহ পত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়।
আমার দেশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুদক থেকে অনুরোধপত্র যেদিনই অর্থাৎ গত ১৯ ডিসেম্বর ইসিতে রিসিভ হয়। ওই দিনই দুদক সচিব বরাবর তথ্যসমূহ প্রেরণ করা হয়। এনআইডির চিঠিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট (হাসিনা, রেহানা, জয় ও টিউলিপ) নামীয় ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিস্তারিত তথ্যাদি (প্রিঙ্গারপ্রিন্টসহ) প্রতিবেদন আকারে প্রয়োজনীয় কাযার্থে প্রেরণ করা হলো।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের এনআইডি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সবারই ঠিকানায় রাজধানী ঢাকা উল্লেখ রয়েছে। শেখ হাসিনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ৫৪ সুধা সদন, গ্রাম/রাস্তা-৫, মৌজা-মহল্লা: ধানমন্ডি আ/এ. ইউনিয়ন-ওয়ার্ড-১৫, নিউমার্কেট, পোষ্ট কোড-১২০৫, উপজেলা/জেলা-ঢাকা। ওনার ভোটার-২৮১৯২০৭৭৯২, পিন নম্বর-১৯৪৭২৬৯১৬৪৯১০০৭৯৮, ফরম নং-৬১০০৭৯৮ এবং ভোটার নম্বর-২৬১৩৪২১০০৭৯৮। ভোটার এলাকা ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা সড়ক নং-৩-৫।
শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত তথ্যে দেখা গেছে, পিতা, মাতা ও স্বামীর নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু পিতার নামের আগে জাতির পিতা উল্লেখ করেননি। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাতার ক্ষেত্রে বঙ্গমাতা না লিখে বেগম ফজিলাতুন্নেছা লেখা হয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা-স্নাতকোত্তর, জন্মস্থান-গোপালগঞ্জ এবং রক্তের গ্রুপ-এ পজিটিভ।
একই ভাবে তার ছেলে জয় পিতা, মাতার নামের পাশাপাশি স্ত্রীর নাম ক্রিস্টিনা ওভারম্যায়্যার ওয়াজেদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, জন্মস্থান- ঢাকা এবং রক্তের গ্রুপ-এ পজিটিভ লেখো আছে। ঠিকানা ৫৪, ধানমন্ডির সূধাসদন। সজীব ওয়াজেদ জয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৫৯৯৩১১৪২৯৬, পিন নম্বর ১৯৭১২৬৯১৬৪৯৬৮১৩৩২, ফরম নম্বর-৮৬৮১৩৩২ ও ভোটার নম্বর-২৬১৩৪২৬৮১৩৩২।
একই ভাবে শেখ রেহানার ব্যক্তিগত তথ্যেও পিতা-মাতার নামের আগে জাতির পিতা ও বঙ্গমাতা লেখা নেই। বড় বোনের আদলে লেখা রয়েছে। নামের শেষে স্বামীর পদবি সিদ্দিক উল্লেখ করেছেন। ঠিকানা রাজধানীর গুলশান-২, ১০, এন ই (এল)-২, রোড-৮৪ গুলশান মডেল টাউন।
তার এনআইডি নম্বর- ৩২৯৩০৭৮৮৬৫, পিন নম্বর-১৯৫৭২৬৯১৬৪৯৬৮১১৮২, ফরম নম্বর-৮৬৮১১৮২ এবং ভোটার নম্বর-২৬১১০৭০২৬৭০৪। ভোটার এলাকা গুলশান-২। শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন তথ্য জাতীয় পরিচপত্রে উল্লেখ নেই।
অপরদিকে, শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ব্রিটিশ এমপি ও সেখানে স্থায়ী বসবাস করছেন। কিন্তু দ্বৈত নাগরিক সত্ত্বেও তিনি জন্মসূত্রে দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েছেন। স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা হিসেবে সুধা সদনের বাসা-৫৪ নং উল্লেখ করেছেন।
তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর-৫০৬৬৯০০৯২৮, পিন নম্বর-১৯৮২২৬৯১৬৪৯০০০০৪২, ফরম নম্বর-১৪১৬৭২৪২ এবং ভোটার এলাকা নম্বর-২৬১৩৪২০০০১৪৯। ভোটারে এলাকা ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা সড়ক নং-৩-৫। ব্রিটিশ এই এমপি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা-স্নাতকোত্তর উল্লেখ করেছেন।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ আমার দেশকে বলেন, সরকারের একটি সংস্থা, অন্য আরেকটি সংস্থার কাছে তথ্য চাইলে অবশ্যই দিতে হবে। রাষ্ট্রীর স্বার্থে দিতে হয়। আশা করছি, তথ্যটি প্রেরক সংস্থাকে সরবরাহ করা হয়েছে। বলেন, যদি কোন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের কাজের প্রয়োজনে আপনার তথ্যও চান সেটিও আমরা দিব।