সমতট ডেস্ক : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তনে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়নে কাজ করছেন দায়িত্বশীলরা। এরমধ্যে গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে সারাদেশের নেতাকর্মীদের যত্রতত্র ব্যানার-পোস্টার, মোটরশোভাযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে। অনেকে সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিজেদের লাগানো ব্যানার-পোস্টার নামালেও কেউ কেউ তোয়াক্কা না করে বহাল তবিয়তে রেখেছেন ব্যানার-পোস্টার। সেজন্য এসব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। প্রয়োজনে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের পাশাপাশি জরিমানাও করবে দলটি।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদায়ে ফাঁকা মাঠে বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে নতুন নতুন সংগঠন গড়ে তুলেছেন কেউ কেউ। দলের পক্ষ থেকে এদের ভুঁইফোড় আখ্যা দিয়ে তাদের লাগাম টানারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
যারা এখনো নির্দেশনা মানছেন না তাদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। যারা সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে জরিমানাও করা হবে। আমরা শিগগিরই সারাদেশে সরেজমিন পরিদর্শন করব।
সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল
দলের পক্ষ থেকে জারি করা নির্দেশনা কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা দেখভালে ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে ‘দলীয় সিদ্ধান্তের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ টিম’। লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায়ই টিমের সদস্যদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলে অগ্রগতির খোঁজ নিচ্ছেন। পাশাপাশি নানা নির্দেশনাও দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই টিমের একজন সদস্য ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এখনো যারা ব্যানার-পোস্টার, ফেস্টুন অপসারণ করেননি তাদের প্রয়োজনে জরিমানা করা হবে।’
টিমের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে তারা ঢাকা মহানগরের সরেজমিন অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ করেছেন। বেশিরভাগ পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানার অপসারণ হয়েছে বলে তাদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে। এখনো যারা বাকি আছেন তারা দ্রুত সরিয়ে ফেলবেন এমন আশা করছেন। শিগগিরই অন্যান্য মহানগর, জেলা, উপজেলায়ও এই টিম সরেজমিন পরিদর্শন করবে।
টিমের সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যারা এখনো নির্দেশনা মানছেন না তাদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। যারা সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে জরিমানাও করা হবে। আমরা শিগগিরই সারাদেশে সরেজমিন পরিদর্শন করব।’
সিদ্ধান্ত না মানলে কী ব্যবস্থা
জানা গেছে, ব্যানার-পোস্টার ফেস্টুন অপসারণ না করে যারা দলীয় নির্দেশ অমান্য করেছেন তাদের অচিরেই সাংগঠনিক ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে— বিশেষ দিবস উপলক্ষে শুধুমাত্র সংগঠনের নামে পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ইত্যাদি লাগানো যাবে। তবে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে তা অপসারণ করতে হবে। এতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ছাড়া অন্য কারও ছবি দেওয়া যাবে না।
নির্দিষ্ট সময় শেষে পোস্টার, ব্যানার অপসারণ না করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে হবে
ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এখনো যারা ব্যানার-পোস্টার, ফেস্টুন অপসারণ করেননি তাদের প্রয়োজনে জরিমানা করা হবে।
পর্যবেক্ষণ টিমের আরেক সদস্য
৩) কোনো ইউনিটের সম্মেলন বা কর্মীসভা উপলক্ষে প্রচার সামগ্রী প্রদর্শনী করলে বা লাগালে তা সেই ইউনিটকে সাত দিনের মধ্যে তা অপসারণ করতে হবে। না হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪) বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বাইরে অর্থাৎ ভুঁইফোড় যেসব সংগঠন আছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৫) কোনো অবস্থাতেই ব্যক্তির পদবী, নাম ব্যবহার করে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন করা যাবে না।
নেতাকর্মীদের দেওয়া নির্দেশনায় কী বার্তা ছিল
গত ৮ সেপ্টেম্বর দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিএনপি ও এর সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়, আপনাদের অধীনস্থ কোনো ইউনিটে সাংগঠনিক কাজের উদ্দেশে সফরকালে কোনো ধরনের মোটরসাইকেল বহর ও কারসহ অন্য কোনো যানবাহনে শোভাযাত্রা পরিহার করতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রঙ-বেরঙয়ের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শন না করতে। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু, অনভিপ্রেত এবং দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী। দলের অতি উৎসাহী কতিপয় নেতা নিজেদের ছবি সম্বলিত পোস্টার প্রকাশ করছেন এবং ফেস্টুন ও ব্যানার ঝুলিয়ে রাখছেন। এহেন পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শন করা থেকে নেতাকর্মীদের বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হলো।
দলের এই নির্দেশনা আসার পর অনেকেই নিজ উদ্যোগে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করেন। তবে খোদ রাজধানীতেও এখনো অনেকের ব্যানার-ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে।