সমতট ডেক্স : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ‘মোবাইল চুরি’র অপবাদে বিদ্যুতের খুঁটির সাথে বেঁধে ইমরান হোসেন(২১) নামে এক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে একদল সন্ত্রাসী। নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্যাতনের শিকার ওই যুবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ইমরান উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মোঃ শাহ আলমের ছেলে। এই ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবার সন্ত্রাসী শহিদুর রেজা রতন মিয়াজীকে প্রধান আসামী করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ইমরান একজন ইলেকট্রিক মেস্ত্রী। শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় তারাশাইল বাজারের বিকাশ দোকান থেকে ইমরান ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় সন্ত্রাসী শহিদুর রেজা রতন মিয়াজী নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী পথরোধ করে অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে মারধর শুরু করে। এ সময়ে তার আত্নচিৎকারে তার মা আফরোজা বেগম এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পেলে। পরে ইমরানকে মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে মায়ের চোখের সামনে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন শুরু করে। সন্ত্রাসীরা চতুরদিকে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়াতে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসতে সাহস করেনি। নির্যাতনের একপর্যায়ে ইমরান অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে তার আত্নীয়-স্বজন এগিয়ে এসে ইমরানকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। নির্যাতনের একটি ভিডিও চিত্র শনিবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা গা-ঢাকা দেয়।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক জাবেদ হোসেন বলেন, রাত ১২টা ২০ মিনিটে মুমুর্ষ অবস্থায় ইমরান হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার পুরো শরীরে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমরা তাকে আশংকাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করি।
ইমরানে মা আফরোজা বেগম বলেন, শহিদুর রেজা রতন মিয়াজী চিহিৃত সন্ত্রাসী। এলাকায় তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। তার সামাজিক অপকর্মের বিরুদ্ধে আমার ছেলে প্রায় সময়ে প্রতিবাদ করতো। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ছেলেকে হুমকি দিয়ে আসছিল। শুক্রবার সন্ধায় ইমরান তারাশাইল বাজার বিকাশ দোকান থেকে টাকা উঠিয়ে ফেরার পথে তাকে একা পেয়ে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর শুরু করে। আমার ছেলের চিৎকার শুনে আমি এগিয়ে গেলে তারা আমাকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পেলে। এ সময়ে তারা মসজিদের সামনের একটি বিদ্যুতের খুঁটির সাথে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রায় ৩ ঘন্টা নির্যাতন করে মৃত ভেবে পেলে রেখে যায়।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইমরান নামে এক যুবককে নির্যাতনের একটি ভিডিও চিত্র আমার নজরে এসেছে। অভিযুক্ত শহিদুর রেজা রতন মিয়াজী প্রধান আসামী করে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।