সমতট ডেস্ক: ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, বহিরাগতদের নিয়ে ডিগ্রি ক্যাম্পাসে মানববন্ধন, শ্রেণি কার্যক্রম, পরীক্ষা কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করে সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করাসহ নানান অভিযোগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে বালিত ঘোষণা করেছে কলেজ প্রশাসন। গত রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) তার বরাবর চিঠি পাঠালেও তা প্রকাশ্যে আসে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি)।
নাহিদুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষার্থী ২০২১-২০২২ সেশনের মাস্টার্স শেষ পর্বের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নবীনগর উপজেলার কাইতলা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।
ছাত্রত্ব বাতিলের চিঠিটির অনুলিপি প্রেরণ করা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও শিক্ষক পরিষদ সম্পাদককে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রশাসনের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের মাস্টার্স শেষ পর্বের প্রাণিবিদ্যা বিভগের ২০২১-২০২২ সেশনের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিপন্থি ও সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেন- যা কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শিক্ষার পরিবেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে সাময়িকভাবে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে নাহিদের অভিযোগ উল্লেখ করে বলা হয়, এ বছরের ২১ জানুয়ারি ডিগ্রি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ে অধ্যক্ষ কার্যালয় অবরুদ্ধ করে কর্মকর্তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও বিশৃঙ্খলা করে সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করে। ২২ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বহিরাগতদের নিয়ে ডিগ্রি ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে কলেজ ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। ২৩ জানুয়ারি বিনা অনুমতিতে বহিরাগতদের নিয়ে ডিগ্রি ক্যাম্পাসে সাংবাদিক সম্মেলন করে। ৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক, যুগ্ম-সম্পাদক, বিভাগীয় প্রধান, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার প্রায় ২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা, সেবাপ্রাপ্তি বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদেরকে ডিগ্রি শাখার প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে অবরুদ্ধ করে রাখে। বহিরাগতদের নিয়ে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে অযাচিত অশালীন উচ্চারণ ও বিশৃঙ্খলা করে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে শ্রেণি কার্যক্রম, পরীক্ষা কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করে সরকারি কাজে মারাত্মকভাবে বাধা সৃষ্টি করে।
১৪ ফেব্রুয়ারি ডিগ্রি ক্যাম্পাসের জামে মসজিদে কলেজ কর্তৃক মনোনীত ইমামকে নামাজ পড়তে বাধা প্রদান করে এবং পবিত্র মসজিদে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা চালায়। ২১ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে সব শিক্ষক-কর্মকর্তা মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলে অধ্যক্ষ ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে অযাচিত অশালীন আচরণ করে মনোনীত ইমামকে নামাজ পড়াতে বাধা প্রদান এবং বহিরাগতদের এনে ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়।
কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঁঞা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কেন আপনার ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে না এই পত্র প্রাপ্তির ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে নিন্ম স্বাক্ষরকারীর কাছে লিখিতভাবে জমা প্রদানের নির্দেশ করা হলো। কলেজ অধ্যক্ষ বিষয়টি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত নাহিদকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৩ জানুয়ারি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখার মসজিদে তাবলিগের বিবদমান দুই পক্ষ মাওলানা সাদ ও জুবায়েরের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে গত ২০ জানুয়ারি তাবলিগ জামাতের সাপ্তাহিক তালিম সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেন কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঁঞা। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিনের মতবিরোধে ২১ জানুয়ারি সকাল ১১টা ২০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করেন কলেজের নজরুল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ধর্মপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা। এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ইমাম মারুফ বিল্লাহকে নানান অভিযোগ তুলে অব্যাহতি দেয় কলেজ প্রশাসন। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ইমামকে চাকরিচ্যুত করার পর থেকেই কলেজে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রতি শুক্রবার নামাজের সময় পূর্বের ইমামকে বহালের দাবি করে আসছে স্থানীয় একটি পক্ষ।
তাদের সঙ্গেই যুক্ত হয়ে নানান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন নাহিদ। প্রতি শুক্রবারই শিক্ষকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে স্থানীয়দের ও কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশের। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কলেজের নামজ শুরুর আগেই স্থানীয় কিশোর ও যুবকরা কলেজের অধ্যক্ষের ওপর হামলা করে। এ সময় তারা অধ্যক্ষের গায়ে আঘাত করে। এ সময় পার্শ্ববর্তী নজরুল হলের শিক্ষার্থীরা পাশে দাঁড়াতে এলে তাদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয়রা। পুলিশ এলেও স্থানীয়দের হামলায় প্রথমে পিছু হটে পরে আবার কলেজে প্রবেশ করে। তবে এখনও উত্তেজনা চলমান আছে।