বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) বর্তমানে এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একাদশ আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফটের সময় ঘনিয়ে এলেও, টুর্নামেন্ট আয়োজন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে প্রচুর সন্দেহ এবং উদ্বেগ। বিসিবির পক্ষ থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, টুর্নামেন্টের দুটি শীর্ষ নেতা—গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ সোহেল ও সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকের হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এই দুই ব্যক্তির অনুপস্থিতি বিসিবির ভেতরে এবং বাইরে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। তারা গত ১২ বছর ধরে বিপিএল পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছেন। কিন্তু এখন, যখন টুর্নামেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় আসন্ন, তখন তাদের অনুপস্থিতি গভর্নিং কাউন্সিলের অভিভাবকহীনতার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। ক্রীড়া মহলে গুঞ্জন উঠেছে, বৈষম্যবিরোধী ক্রীড়া সংগঠকদের চাপের মুখে তারা বিসিবিতে ফিরতে নারাজ।
শেখ সোহেলের অনুপস্থিতি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কার্যক্রমকে একরকম থমকে দিয়েছে। আর মল্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাজমুল হাসান পাপনের ছত্রছায়ায় থেকে লিগকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এতে করে, দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় টি২০ টুর্নামেন্টটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিপিএলের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো এমন ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। টুর্নামেন্টের অভিভাবকহীনতা নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো উদ্বিগ্ন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারম্যান নাফিসা কামাল, যিনি বিপিএলের প্রথম মৌসুম থেকে অংশ নিচ্ছেন, সম্প্রতি তার ফ্র্যাঞ্চাইজির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি রেভিনিউ শেয়ার না করা হয়, তবে কুমিল্লা আর বিপিএলে অংশ নেবে না। অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোও একই ধরনের দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়েছে, তবে মল্লিকের অবিচল অবস্থান এসব অভিযোগের প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয়নি।
এমনকি, বিপিএলের প্রাক্তন সদস্য সচিব সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীরও অভিযোগ করেছেন, মল্লিকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে টুর্নামেন্টটির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে ওঠেনি। বিপিএলের শুরুতে বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ছিল, কিন্তু গভর্নিং কাউন্সিলের সঙ্গে রেভিনিউ শেয়ারিং নিয়ে মতবিরোধের কারণে তারা ধীরে ধীরে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।
বিপিএলের দ্বিতীয় আসরের ফিক্সিং কেলেঙ্কারির পর থেকে টুর্নামেন্টটি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু পরিচালনাগত সংকট এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। মল্লিকের নেতৃত্বে টুর্নামেন্টের টিভি সম্প্রচার এবং অন্যান্য আয়োজনে স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ উঠেছে, যা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের হতাশ করেছে।
বিসিবির বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিষ্কার ইমেজের কোনো পরিচালককে গভর্নিং কাউন্সিলের নেতৃত্বে নিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। এটা করলে বিপিএল তার পুরনো গৌরব ফিরে পেতে পারে, এবং টুর্নামেন্টটি আবারও দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রিয় ইভেন্টে পরিণত হতে পারে।