সমতট ডেস্ক: সম্প্রতি সিলেটে ঘটে যাওয়া দুটি আলোচিত ঘটনায় সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ বিভেদ নিরসনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড। দলের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (১৩ জুন ২০২৪) দুপুরে সিলেট নগরীর দরগাগেট এলাকার একটি হোটেলে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের এক বৈঠকে এই নির্দেশনা আসে।
বিতর্কের সূত্রপাত
গত ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেট মহানগর বিএনপির আলোচনা সভায় প্রকাশ্য বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। এই ঘটনা দলের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এছাড়া, গত ২০ মে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরীর মুঠোফোনে আওয়ামী লীগদলীয় পলাতক সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ‘ফোন কল’ আসার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এমদাদ হোসেন এই ঘটনায় রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও তার অনুসারীদের অভিযুক্ত করলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ শুরু হয়।
কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ও বৈঠক
এই দুটি ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় কেন্দ্রীয় বিএনপি দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। আলোচনা সভার ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব পান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আর ফোন কল–কাণ্ডের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীকে। এই দুটি কমিটি একত্রিত হয়ে শুক্রবার সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
বৈঠকে এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও মিফতাহ্ সিদ্দিকী ছাড়াও সিলেট বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ এবং সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও, ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, এমদাদ হোসেন চৌধুরী এবং জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী সভায় উপস্থিত থেকেও বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না পাওয়া সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন ও মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
নির্দেশনা ও সমাধান
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দুটি ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার স্বার্থে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল ও কার্যকর করার জন্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দুই নেতাকে সব বিভেদ ও দ্বন্দ্ব ভুলে একসঙ্গে কাজ করার জন্যও বলা হয়েছে। এছাড়া, সম্প্রতি সৃষ্ট দুটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সব নেতাকেই ভবিষ্যতে দায়িত্বশীলতার পরিচয় রাখার অনুরোধ জানানো হয়।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, “সম্প্রতি যে দুটি ঘটনা ঘটেছে, এর সমাধান হয়েছে। পারস্পরিক ভুল–বোঝাবুঝি মিটিয়ে আগামী দিনে সবাইকে দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেব, বৈঠকে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।”
এই নির্দেশনার ফলে সিলেটের বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল আপাতত প্রশমিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, এবং দলীয় কার্যক্রমে নতুন গতি আসবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।