রাকিবুল হাসান ।।
শেখ হাসিনার পতনের পর বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমলেও চালের বাজারে ঘটেছে ব্যতিক্রম। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চাল ব্যবসায়ীরা বন্যার অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন, যার ফলে উত্তরের জেলাসহ কুষ্টিয়াতেও চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক মাসে পাইকারিতে ৫০ কেজির বস্তার দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে, যা খুচরা বাজারে গ্রাহকদের কেজি প্রতি ৩-৪ টাকা বেশি দিতে বাধ্য করছে।
ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, সরকারের পতনের পর চালের সিন্ডিকেট ভাঙার প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। বরং তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রংপুরের সিটি বাজারে চাল কিনতে আসা একজন রিকশাচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, “ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন। নতুন সরকার সিন্ডিকেট না ভাঙলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।”
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো দাবি করা হচ্ছে যে,
চালের বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই।
তাদের মতে,
পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যায় সরকারি গুদাম ও ব্যক্তিমালিকানাধীন চালের মজুদ নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে চালের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিল মালিক ও মজুতদাররা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন এবং তদারকির অভাবে অতি মুনাফা করছেন।
মিলারদের মতে,
বর্তমান পরিস্থিতিতে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে এবং মজুত চালও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। লাইসেন্সবিহীন ধান ব্যবসায়ীদের আধিপত্যও মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়াচ্ছে।
কুষ্টিয়ার চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন,
“মিলাররা ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় যে চাল বিক্রি করছেন, সেই চাল করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্যাকেটজাত করে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে।”
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মহাখালী কাঁচাবাজারে মাঝারি আকারের চাল যেমন বিআর-২৮ ও পাইজাম সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে এই চাল প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা মাসখানেক আগে ছিল ৫৪-৫৮ টাকা। এছাড়া, মোটা চালের দাম ৫০-৫৪ টাকা থেকে বেড়ে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রংপুর অঞ্চলে মোটা চালের কেজি ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েকদিন আগেও ৫০ টাকার আশেপাশে ছিল। রংপুর জেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানান, “বন্যায় চালের বড় আড়তগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চালের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।”
কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে সরু চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মিলগেটে মান ভেদে সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৬৭ টাকায়। তবে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার সতর্ক করে বলেছেন, “ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে চালের দাম বাড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, “পট পরিবর্তনের সুফল ভোক্তারা পাচ্ছেন না।” তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, বাজার তদারকিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।