ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের স্বনামধন্য খ্যাতনামা আইনজীবী মো. মাহাবুবুর রহমান ঐতিহ্যবাহী লিংকন্স ইন থেকে বার-এট-ল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর আগেই বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড (বিএসবি) তাকে প্রাকটিসিং ব্যারিস্টার হিসেবে অনুমোদন দেয়। তিনি দীর্ঘদিন সলিসিটর অ্যাডভোকেট হিসেবে ইউকের সকল উচ্চপর্যায়ের আদালতে কৃতিত্বের সাথে লিগাল প্রাকটিস করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি নিউ ওয়ালক চেম্বারস নামে একটি ব্যারিস্টার চেম্বারে টেনান্সি পেয়েছেন।
ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান তার মেধা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ইউকের আইনঙ্গনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন, যা শুধু তার জন্য নয়, বরং আইন অঙ্গনে তার সহকর্মী, বাংলাদেশী কমিউনিটি ও আইনের শিক্ষার্থীদের জন্যও একটি বড় অনুপ্রেরণা।
তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে, এই প্রত্যাশা করেছেন তার সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যে চারটি ইনস অব কোর্ট থেকে কল-টু-দ্য বার ডিগ্রী প্রদান করা হয়। চারটি ইন হলো- লিংকনস্ ইন, গ্রেজ ইন, ইনার টেম্পল এবং মিডল টেম্পল। দ্যা অনারেবল সোসাইটি অব লিংকনস্ ইন সবচেয়ে বড় এবং সদস্য সংখ্যা বেশী। দ্বিতীয় বৃহত্তম ইন হলো ইনার টেম্পল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ লিংকনস্ ইন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রী গ্রহণ করেন। মাহাত্মা গান্ধী ব্যারিস্টারি ডিগ্রী নেন ইনার টেম্পল থেকে। ব্যারিস্টার জায়মা রহমানও এই ইন থেকে ব্যারিস্টারী ডিগ্রী নিয়েছেন।
মূলত একজন আইনের শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় ডিগ্রী সম্পন্ন করার পর ইউকে’র চারটির যে কোনো একটি ইনস অব কোর্ট থেকে কল টু দ্য বার গ্রহণ করতে হয়। এরপর লিগ্যাল প্রাকটিসে প্রবেশ করতে হলে, অর্থাৎ প্রাকটিসিং ব্যারিস্টার হিসেবে কাজ করতে হলে ১২ মাস থেকে ২৪ মাসের পিউপিলেজ বা প্রাকটিক্যাল ট্রেইনিং সম্পন্ন করতে হয় কোনো সুপারভাইজার ব্যারিস্টারের অধিনে। আর এই পিউপিলেজ বা প্রাকটিক্যাল ট্রেইনিং এর সুযোগ পাওয়া অত্যন্ত কঠিন এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ।
হাতে গোনা খুব অল্প সংখ্যক বাংলাদেশি প্রাকটিসিং ব্যারিস্টার হিসেবে কাজ করার গৌরব অর্জন করেছেন। নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই সংখ্যা এখন কিছুটা বাড়ছে।
তবে ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমানের প্রকটিসিং ব্যারিস্টার হওয়ার গল্পটা অনেকটা ভিন্ন আমেজের। তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক থেকে আইন পেশায় যুক্ত হন ২০১৫ সালে। প্রথমে তিনি ইউকের সিটিজেন অ্যাডভাইস বু্যারোতে অ্যাডমিনিসট্রেটর হিসেবে কাজ করেন। এরপর তিনি লন্ডনের জেএস সলিসিটর ফার্মে প্যারা লিগাল হিসেবে কাজ করেন। তিনি লন্ডনের অন্যতম স্বনামধন্য ব্যারিস্টার চেম্বার গার্ডেন কোর্ট চ্যাম্বারে (Garden Court Chambers ) খ্যাতিমান বিচারপতি ও ব্যারিস্টার মার্ক সায়েমস্-এর সহকারি হিসেবে কাজ করেছেন। কনসালটেন্ট সলিসিটর হিসেবে কাজ করেছেন আরেকটি স্বনামধন্য সলিসিটর ফার্ম ডিপলট সলিসিটর্সে।
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার, অ্যাসাইলাম ও ইমিগ্রেশন এবং মানি লন্ডারিং বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর বৃটেনে ওয়েস্ট মিনিস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা ইন ল’ এবং লিগ্যাল প্রাকটিস কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি বিপিপি ইউনিভার্সিটি থেকে সিলিল আইনের ওপর হাইয়ার রাইটস্ অব অডিয়েন্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। এছাড়া তিনি ২০১৮ সালে সুইডেনের স্টক হোম ইউনিভার্সিটি এবং হেগ’এর আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টের (International Criminal Court) যৌথ প্রজেক্টে International Criminal Court -এর কার্যবিধি এবং সমকালীন বিচারকার্যের উপরে গবেষণা সম্পন্ন করেন। বেলজিয়ামের University of Antwerp থেকে তিনি ইউরোপীয়ান মাইগ্রেশন এন্ড ডাইভার্সিটি বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেছেন প্রেস ইনস্টিটউট অব বাংলাদেশ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে। সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ পাঠ গ্রহণ করেন University Of ARTS London (UAL) থেকে। সাংবাদিকতার ওই কোর্স সম্পন্ন করেই তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কাজ করার সুযোগ লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন ২০০১ সালে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর তিনি বাংলাদেশের দৈনিক আমার দেশ, বাংলাবাজার পত্রিকা, ইউকে’র প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্যা গার্ডিয়ান এবং সর্বশেষ বিশ্বখ্যাত রয়টার্স নিউজে কাজ করেছেন।
সাংবাদকিতা জীবনে তিনি যেমন বেশক’টি পুরস্কার পেয়েছেন, তেমনি অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখতে গিয়ে জীবন হমুকির মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ সম্মেলন কভার করতে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভুয়া সাউথ সাউথ পুরস্কারের তথ্য ফাঁস করে তিনি আলোচিত হন এবং জীবন হুমকির মুখোমুখি হন। এরপর তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।
আইন পেশা ও সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি বৃটিশ কাউন্সিলে আইইএলটিএস-এর মার্কার হিসেবে কাজ করেছেন কয়েকবছর। এছাড়া লন্ডনের বিখ্যাত কিংস কলেজ এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস্ এন্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স-এ এক্সাম সেকশনে কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া কাজ করেছেন বিশ্বখ্যাত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান Redress – এ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ছিন্নমূল মানুষের জন্য কাজ করেছেন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান আল খায়ের ফাউন্ডেশনে। তিনি ইউকের খ্যাতিমান চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান ব্রেকিং ব্যারিয়ার্সে (Breaking Barriers) অ্যাম্বেসডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইংল্যান্ড ওন্ড ওয়েল্-এর একজন প্রাকটিসিং সলিসিটর হিসেবে মাহাবুবুর রহমান ২০২১ সাল থেকেই ল’ সোসাইটি ও এসআরএ’র সদস্য। ২০১৮ সাল থেকে তিনি অনারেবল সোসাইটি অব লিংকনস্ ইন এর সদস্য।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাংবাদিক ইউিনয়ন, ইউকে’র ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্য।