নোয়াখালী: টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে নোয়াখালী জেলার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জেলা শহরসহ আটটি উপজেলার অসংখ্য বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে, এবং বন্যার আতঙ্ক তাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী,
সোমবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর ফলে নোয়াখালী সার্কিট হাউস, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাসভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা এবং নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জেলার সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর—এই উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ নিচু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাকসবজির খেত, এবং অনেক রাস্তা। মানুষের ঘরে পানি ঢুকে পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাহাব উদ্দিন বলেন,
“রাস্তাঘাট ডুবে গেছে, এখন মানুষের ঘরে পানি ঢুকেছে। মাছের ঘেরসহ সব কিছু ভেসে গেছে। এত পানি আগে কখনো দেখিনি। বৃষ্টি হলে সাধারণত পানি নেমে যায়, কিন্তু এবার পানি নামছে না।”
বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের তৈরি করার ফলে খাল দখল হয়ে গেছে, যা জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা রুবেল। তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে খাল পরিষ্কার করে দিলে জলাবদ্ধতা থাকবে না।”
সুবর্ণচরের ফারজানা আক্তার জানান,
“আমাদের বেশিরভাগ কৃষিজমি তলিয়ে গেছে, বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা হাত গুটিয়ে বসে আছে।”
নোয়াখালী আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টি হচ্ছে, এবং সতর্ক সংকেতের কারণে জেলেদের তীরবর্তী স্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল জানান, “নোয়াখালীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, যা বিগত ২০ বছরে হয়নি। জোয়ার থাকায় পানি নামতে পারছে না। আমরা শহর ও আশপাশের ১৬১ কিলোমিটার খাল খনন করেছি, যাতে পানি নিষ্কাশন সহজ হয়। তবে, পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেন ও নালা রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।”
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন,
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য উপজেলা পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, পানিবন্দি মানুষের জন্য নগদ ৮ লাখ টাকা ও ৯৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এবং প্রয়োজনে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।
এ ঘটনার পর নোয়াখালীতে মানুষের জীবন যাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অবৈধ দখল ও প্রশাসনিক দুর্বলতা এই বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, এবং স্থানীয় জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।