মমতট ডেস্ক; আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নতুন মেরুকরণ। মোট ২ লাখ ৭০ হাজার ৭০০ ভোটার অধ্যুষিত এই আসনে বিএনপি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত হয়ে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, যা একক প্রার্থী নিয়ে মাঠে থাকা জামায়াতে ইসলামীর জন্য সুযোগ তৈরি করেছে।
প্রধান প্রতিপক্ষ কারা?
এই আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ইসলামী অন্যান্য দলগুলো নিয়মিত কর্মসূচি পালন করলেও এখনো সাংগঠনিকভাবে তেমন শক্তিশালী হতে পারেনি। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কোনো তৎপরতা নেই। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, নেত্রকোনা-৫ আসনে মূল লড়াইটা হবে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, বিএনপি যদি প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করে এবং তাদের গ্রুপিং রাজনীতির অবসান না হয়, তাহলে আসনটি জামায়াতের দখলে চলে যেতে পারে। এর কারণ হলো, জামায়াতের একক প্রার্থী অধ্যাপক মাসুম মোস্তফা, যিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা:
নেত্রকোনা-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে পাঁচজন নেতা জোরদার প্রচারণা চালাচ্ছেন:
- আবু তাহের তালুকদার: নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ২০১৮ সালেও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে কারাবরণসহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
- এ এস এম শহীদুল্লাহ ইমরান: কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য। তিনি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন এবং এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের সহায়তায় কাজ করছেন।
- ইঞ্জিনিয়ার মাহাবুব আলম রানা: বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রাবেয়া আলী ও প্রয়াত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ডা. মোহাম্মদ আলীর ছেলে। লন্ডনে বসবাস করলেও ঘন ঘন দেশে এসে গণসংযোগ করছেন এবং পারিবারিক ইমেজকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন।
- বাবুল আলম তালুকদার: উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে গত দেড় দশক ধরে পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির নির্যাতিত নেতাদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিত। দলের দুঃসময়ে তিনি ১১টি ইউনিয়নে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
- ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ খান: যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি এলাকায় এসে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়, গণসংযোগ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লিফলেট বিতরণ করছেন।
এসব মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন, অসহায় ও দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তা করছেন এবং নিয়মিত গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন।
অন্যান্য দলের প্রার্থীরা:
- অধ্যাপক মাসুম মোস্তফা: নেত্রকোনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি কারানির্যাতিত হয়েও নানা কৌশলে এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
- মাওলানা হাবিবুল্লাহ খান: বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের একক প্রার্থী হিসেবে এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন এবং নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।
- প্রিন্সিপাল আব্দুল ওয়াহহাব হামিদী: ঢাকা মহানগর হেফাজতের সদস্য এবং পূর্বধলা উপজেলা জমিয়তের সাবেক সভাপতি। গত ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিশ দলীয় জোটের শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নমিনী ছিলেন। তিনিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা কৌশলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় নাগরিকদের উদ্বেগ:
স্থানীয় একাধিক সচেতন নাগরিক সমতট টিভিকে জানিয়েছেন, এই উপজেলায় বিএনপির একাধিক গ্রুপ রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি গ্রুপ প্রকাশ্যে রয়েছে। তারা নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত। তাদের মতে, বিএনপির গ্রুপিং রাজনীতির নিরসন না হলে আসনটি হাতছাড়া হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
এবারের মনোনয়ন যুদ্ধে বিএনপির একাধিক প্রার্থীর মধ্যে কে দলীয় টিকিট পাবেন, তা বলা কঠিন হলেও বেশিরভাগ ভোটারের মতে, আগামী নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।