সমতট ডেক্স:ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর ভর্তুকি মূল্যের পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি করেও চাহিদা মেটাতে পারছে না। ট্রাকের সামনে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। অভিযোগ উঠেছে, নিম্ন আয়ের লোকেরা এ পণ্য কিনতে পারছে না, মুহূর্তের মধ্যেই চলে যাচ্ছে সুবিধাবাদী সিন্ডিকেটের হাতে। তবে এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করছে টিসিবি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে হিমশিম খাওয়া মানুষের কাছে টিসিবি পণ্যের ওপর আগ্রহ বাড়ছেই। আগে স্বল্প আয়ের মানুষ টিসিবির পণ্য কিনলেও এখন সরকারি, বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী সবাই এখান থেকে পণ্য কিনছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবির ট্রাকে পণ্য কিনতে ভোগান্তি জেনেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন এসব মানুষ।
অভিযোগ উঠেছে, ক্রেতাদের দীর্ঘলাইনের ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো আইনশৃঙ্খলার সদস্য থাকে না। ফলে অনেকেই একাধিকবার পণ্য কিনে তা বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছেন। যে কারণে সাধারণ ক্রেতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয় ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুগ্মপরিচালক (অফিস প্রধান) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ১ কোটি কার্ডধারী সুবিধাভোগীর বাইরে এ ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। আগে যেখানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৫০টি ট্রাকে প্রতিটিতে ৩৫০ জনের জন্য পণ্য সরবরাহ করা হতো, সেখানে বর্তমানে ৭০টি ট্রাকে ৪০০ জনের করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
এরপরও চাহিদা থাকতেই পারে। তবে পণ্য বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, প্রতিদিন সকালে স্পটের শিডিউল করা হয়। ফলে এত দ্রুত এ নিয়ে অনিয়মের সুযোগ নেই। তবে তিনি বলেন, শুক্রবার বাদে সপ্তাহের ছয়দিন কোন কোন জায়গায় পণ্য বিক্রি করা হবে, তা অনেকের কাছেই পরিচিত হয়ে ওঠায় আগে থেকেই অনেকে অপেক্ষা করে থাকে।
আগামী রমজান মাস উপলক্ষে পণ্য সরবরাহ আরও বৃদ্ধি করা হবে কি না- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিস্থিতির আলোকে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের খবর পেয়ে তাঁতীবাজার এলাকা থেকে বংশালে পণ্য কিনতে আসেন মো. ফজলুল হক। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো পণ্য কিনতে পারেননি। তার মতো এখান থেকে আরও ১০০ জনের মতো নারী-পুরুষ খালি হাতে ফিরে গেছেন।
তার অভিযোগ, প্রকৃত নিম্ন আয়ের মানুষেরা টিসিবির এ কম দামের পণ্যগুলো পাচ্ছেন না। তার মতে, ভাতের হোটেল ব্যবসায়ীসহ কিছু অসাধু চক্রের হাতে চলে যাচ্ছে। তারা ট্রাক থামার সঙ্গে সঙ্গে পূর্বপরিকল্পিতভাবে নিজেদের লোকজন লাইনে দাঁড় করিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই ট্রাকের পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
আবার অনেকে কিনে নিয়ে পাশেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে হতদরিদ্ররা পাচ্ছেন না। তার মতে, টিসিবির ডিলারদের ট্রাকের লোকেরা এ ধরনের সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার।
সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে টিসিবির এ পণ্য বিক্রি করলে নিম্ন আয়ের লোকেরা পাবেন, অন্যথা সরকারের এ মহৎ কাজের সুফল পাবে না সাধারণ মানুষ। তবে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের বিক্রেতারা বলছেন, এটা সবার জন্য উন্মুক্ত, ফলে কেউ কিনতে চাইলে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই।
বংশাল থেকে রহিমা বেগম (৩৫) টিসিবির পণ্য কিনতে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর পণ্য হাতে পান। রহিমা বলেন, সামর্থ্যবানরাই এ পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার অভিযোগ, এমন কিছু লোক রয়েছেন, যারা নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে টিসিবির পণ্য কিনে নিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই তারা বিক্রি করে দিয়ে আবারও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। প্রতিদিন তারা এ ধরনের কাজ করছেন। এর ফলে নিম্ন আয়ের মানুষেরা পণ্য কিনতে পারছে না।
আজিমপুর, বংশাল, সদরঘাট, পল্টন, সচিবালয়, মতিঝিল, শাহবাগ ও চকবাজারসহ বিভিন্ন টিসিবির ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় পয়েন্টে একই ধরনের চিত্র লক্ষ করা গেছে।
প্রসঙ্গত, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে ট্রাকসেলের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাল-ডাল ও ভোজ্যতেল বিক্রি করছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশে (টিসিবি)। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন ৭০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে ২ হাজার ৮০০ জনের কাছে এসব পণ্য বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) উদ্যোগে কম দামে চাল, ডাল, তেল ও আলু বিক্রি করে এলেও বর্তমানে দাম কমে যাওয়ায় আলু বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারছেন। এসব পণ্যের মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০, চাল ৩০ টাকায় কেনা যায়।
টিসিবির ভর্তুকি মূল্যের পণ্য বিক্রি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগামী দিনেও এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে সাধারণ ভোক্তাদের প্রত্যাশা। এদিকে সম্প্রতি টিসিবির জন্য দেশীয় বাজার থেকে ২৮৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার ভোজ্য তেল ও মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ১৮৯ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ক্রয়ে ৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় হবে সরকারের।