ক্যালেন্ডার
    April 2025
    M T W T F S S
     123456
    78910111213
    14151617181920
    21222324252627
    282930  
    ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | বৃহস্পতিবার | গ্রীষ্মকাল
    ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | বৃহস্পতিবার | গ্রীষ্মকাল
    মো: রকিবুল হাসান

    অল্প কিছুদিন আগেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিনগুলো কেটেছে আদালতের বারান্দায়। কখনও তাঁকে হয়রানিমূলক মামলায় জড়ানো হয়েছে, কখনও আবার তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবু, আজ সেই নিপীড়িত অর্থনীতিবিদই বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন, যিনি দেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন।

    ড. ইউনূস, যিনি “গরিবের ব্যাংকার” হিসেবে পরিচিত এবং যিনি দারিদ্র্য, বেকারত্ব, এবং কার্বন নিঃসরণকে শূন্যে নামিয়ে আনার তত্ত্ব দিয়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন, তাঁর সামনে এখন নতুন এক চ্যালেঞ্জ। জাতির বিভক্তি এবং সহিংসতার ছোবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে তাঁকে, এবং গণতন্ত্র ও শান্তির পথে জাতিকে নিয়ে যেতে হবে।

    অতীতের স্মৃতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কেমন করে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে নিরন্ন মানুষের দুঃখ দেখে তিনি তাদের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প করেন। সেই সংকল্প থেকেই জন্ম নেয় গ্রামীণ ব্যাংক। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার এই মডেল বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়, যা তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার এনে দেয়। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের এই ধারণা আজও বিশ্বজুড়ে অনুসরণ করা হচ্ছে।

    তাঁর উদ্ভাবনী কাজের স্বীকৃতি হিসেবে, অধ্যাপক ইউনূসকে বিশ্বের ৬২টি বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করেছে এবং ১০টি দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কারসহ ১১২টি পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এই সফলতার পেছনে রয়েছে তাঁর সৃজনশীলতা, অদম্য সাহস, এবং মানুষের জন্য ভালো কিছু করার অবিচল আকাঙ্ক্ষা।

    বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে শেখ হাসিনার নিষ্ঠুর শাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন এই নোবেলজয়ী। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।

    বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে ড. ইউনূসের দিকে। তিনি কীভাবে এই সংকটময় মুহূর্তে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবেন, তা দেখার অপেক্ষায় সবাই। তাঁর লক্ষ্য শুধু সহিংসতা বন্ধ করা নয়, বরং একটি নতুন ভবিষ্যতের পথ দেখানো, যেখানে গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

    ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জন্মগ্রহণ করা ড. ইউনূসের জীবন কাহিনী এক অনন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় এক স্কুল থেকে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু, যা পরে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ছাত্র করে তোলে। এর পর যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি অর্জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, এবং শেষে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা, সবই তাঁর জীবনকে বিশিষ্ট করেছে।

    শিক্ষা, উদ্ভাবন, এবং সামাজিক ব্যবসা নিয়ে তাঁর নিরলস কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্বব্যাপী তাঁকে সম্মান জানানো হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হবে কি না, তা কেবল সময়ই বলে দেবে। তবে তাঁর সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বের দক্ষতা, এবং মানুষের কল্যাণের জন্য তাঁর গভীর প্রতিশ্রুতি তাকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শক্তি যোগাবে, এতে সন্দেহ নেই।

    এই মুহূর্তে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে। আর এই অধ্যায়টি শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।

    Share.
    Leave A Reply