সমতট ডেস্ক : চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে ল্যাপারোস্কপিক গলব্লাডার অপারেশনের পর এক তরুণী চিকিৎসক জটিলতার মুখে পড়লে, এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় এক নতুন ও দুঃসাধ্য পদ্ধতিতে তাঁর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। সিনিয়র কনসালটেন্ট, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল, লিভার ডিজিজ ও মেডিসিন বিভাগের ডা. ইকবাল মূশের্দ কবির এক জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এন্ডোস্কোপিক রেট্রোগ্রেড কোলাঞ্জিও-পেনক্রিয়াটোগ্রাফি (ইআরসিপি) সম্পন্ন করে এই অসাধ্য সাধন করেছেন।
জটিলতার সূত্রপাত
ঘটনার সূত্রপাত হয় চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে গলব্লাডার অপারেশনের পর। তরুণী ওই চিকিৎসক জন্ডিস, জ্বর ও তীব্র পেটব্যথা নিয়ে গুরুতর জটিলতায় পড়েন। এমআরসিপি পরীক্ষায় দেখা যায়, তার পিত্তনালীতে পাথর আটকে আছে এবং একের পর এক জটিলতা দেখা দেয়। চট্টগ্রামের একজন প্রবীণ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট রোগীর ডুওডেনামের পেপিলা খুঁজে না পাওয়ায় ইআরসিপি করতে ব্যর্থ হন। এরপর সার্জারির মাধ্যমে পাথর অপসারণের চেষ্টাও সফল হয়নি। ফলস্বরূপ, লিভার ও রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে।
এভারকেয়ারে জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম
রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে দ্রুত এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় পাঠানো হয়। সেপটিক শকে থাকা রোগীকে এইচডিইউতে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। দু’দিন পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ডা. ইকবাল মূশের্দ কবির ইআরসিপি করার সিদ্ধান্ত নেন।
ইআরসিপি শুরু হলে দেখা যায়, ডুওডেনামে একটি বড় ডাইভার্টিকুলামের ভেতরে পেপিলা এমনভাবে ঢাকা ছিল যে তা খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে রোগীর জীবন রক্ষায় ডা. কবির তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন এবং একটি নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেন। তিনি ডাইভার্টিকুলামের পাশে একটি মেটালিক ক্লিপ বসিয়ে পেপিলাকে সঠিক অবস্থানে নিয়ে আসেন। এরপর পেপিলা সামান্য কেটে বেলুন দিয়ে প্রসারিত করে পাথরটি সফলভাবে অপসারণ করেন এবং পিত্তনালীতে একটি স্ট্যান্ট বসিয়ে দেন।
ডা. কবির জানান, এই প্রক্রিয়াটি বলার চেয়েও অনেক বেশি জটিল ছিল। সামান্যতম ভুলেও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। পুরো দল অত্যন্ত সতর্ক ও সচেতনভাবে কাজ করেছে।
সফলতার গল্প এবং দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা
এই জটিল চিকিৎসা সফল হওয়ায় রোগীর অবস্থার দ্রুত উন্নতি ঘটে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসে এবং কিছুদিন পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যান। দুই সপ্তাহ পর ফলোআপে এলে পিত্তনালী থেকে স্ট্যান্ট অপসারণের পর তিনি সম্পূর্ণরূপে সুস্থতা অনুভব করেন।
ডা. ইকবাল মূশের্দ কবির উল্লেখ করেন, এভারকেয়ার হসপিটালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের উন্নত প্রযুক্তি এই চিকিৎসায় অন্যতম মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের কঠিন অবস্থায় পেপিলা খুঁজে বের করে ইআরসিপি করা প্রায় অসম্ভব ছিল, তবে সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত এবং টিমের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তারা সফল হয়েছেন। পূর্বে কেউ এইভাবে ইআরসিপি করেছে কিনা, তা তার জানা নেই।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করলো যে, দেশেই এখন আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সম্পন্ন হচ্ছে। ডা. কবিরের বিশ্বাস, বাংলাদেশের দক্ষ টিম এবং আধুনিক প্রযুক্তির ওপর ভরসা রেখে রোগীদের আর বিদেশে পাড়ি না জমিয়ে দেশেই চিকিৎসা নেওয়া উচিত। সবার সহযোগিতা ও আস্থা থাকলে ভবিষ্যতেও এমন জটিল ও জীবনঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।