সমতট ডেস্ক
জেনারেশন জেড’ (Generation z); সংক্ষেপে ‘জেন জি’। সম্প্রতি এই প্রজন্মকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যম এবং সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শোনা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও এই প্রজন্মকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের খবর প্রকাশ করছে।
‘জেনারেশন জেড’ কারা?
জেনারেশন জেড বা জোনরেশন জি’কে Gen z, iGeneration, Gen Tech, Gen Wii, Homeland Generation, Net Gen, Digital Natives, Plurals এবং Zoomers নামেও ডাকা হয়। কারণ, এই প্রজন্ম বড় হয়েছে ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে।
ব্রিটানিকা বলছে, ‘জেনারেশন জেড’ ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে এবং ২০০০-এর দশকের প্রথম দিকে জন্ম নেয়া আমেরিকানদের বুঝাতে এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হয়।
কিছু সোর্চ আরও নির্দিষ্ট করে বলে- ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যারা জন্মগ্রহণ করেছে তারাই জেন জি।
সে হিসেবে, ‘জেন জি’ বলতে যে প্রজন্মকে বুঝানো হচ্ছে তাদের বয়স ১২ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে।
আমেরিকার একটি নির্দিষ্ট প্রজন্মকে বুঝাতে জেনারেশন জি টার্ম ব্যবহৃত হলেও এখন বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও একই প্রজন্মকে বুঝাতে প্রায়ই এই শব্দগুচ্ছে ব্যবহার হয়ে থাকে।
জেনারেশন জি হল মিলেনিয়াল জেনারেশনের পরের প্রজন্ম। মিলেনিয়াল জেনারেশনকে বলা হয়ে থাকে জেনারেশন ওয়াই (Generation Y)। আর তাদের আগের প্রজন্মকে বলা হয় জেনারেশন এক্স (Generation X)
জেনারেশন জেড’র বৈশিষ্ট্য
জেনারেশন জেড বা জেনারেল জের্স (Gen Zers) ২০০৭-২০০৯ সালের মহামন্দা এবং কোভিড-১৯ মহামারী দ্বারা একটি নতুন ছাঁচ পেয়েছে।
তারা আইফোনের যুগে বড় হয়েছে। আর আইফোন আত্মপ্রকাশ করেছিল ২০০৭ সালে। এই জেনারেশন তাদের প্রারম্ভিক বছরগুলোতে মার্কিন সমাজে একটা পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণের মধ্যদিয়ে গেছে। যেমন- প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্টের (বারাক ওবামা) নির্বাচন এবং সমকামী বিবাহের বৈধতা।
সাধারণ বিচারে ‘জেনারেশন জেড’কে আজ পর্যন্ত আমেরিকানদের মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় প্রজন্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জেনার্সদের প্রায় ৫০ শতাংশ নৃতাত্ত্বিক ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন হিস্পানিক।
পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় Gen Z-দের অন্তত একজন বিদেশি বংশোদ্ভূত অভিভাবক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
Gen Z আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় পরিবেশে বেড়ে উঠেছে এবং আইনিভাবে স্বীকৃত অধিক হারে একক পিতা-মাতা, জাতিগত মিশ্র পরিবারের সন্তান।
প্রকৃতপক্ষে, ১৬ শতাংশ আমেরিকান Gen Zers নিজেদের এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে মনে করে এবং এই হার আগের যেকোনো প্রজন্মের চেয়ে বেশি।
তাদের শহর এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় বসবাস করার সম্ভাবনা বেশি। এদের মাত্র ১৩ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় বেড়ে উঠছে। ২০১৮ সালের এক গবেষণার বরাতে ব্রিটানিকা জানিয়েছে, জেনারেল জেড-এর সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যরা বিয়ের ক্ষেত্রে দেরি করেছেন। এদের মাত্র ৪ শতাংশ ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে করছেন। এই হার তাদের আগের প্রজন্ম অর্থাৎ মিলেনিয়াল প্রজন্মের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
জেন জি হল, প্রথম প্রকৃত ডিজিটাল নেটিভ জেনারেশন। ঠিক মিলেনিয়ালদের বিপরীত। কারণ মিলেনিয়াল প্রজন্ম ইন্টারনেটের উত্থান মধ্য দিয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু শুধু ক্যাবল টেলিভিশন এবং ল্যান্ডলাইন ফোনের সাথে বেড়ে উঠছে।
জেন জি’র সদস্যদের অধিকাংশই স্মার্টফোনের আগের জীবন মনে করতে পারেন না। এরা স্ট্রিমিং কন্টেন্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক প্রবেশযোগ্যতার সময় বড় হয়েছে। তারা যেভাবে ইন্টারনেটের সাথে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা পূর্ববর্তী প্রজন্মের যোগাযোগমাধ্যমের থেকে আলাদা।
কিছু প্রতিবেদনে জেনারেশন জেডের সদস্যদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় বেশি বাস্তববাদী এবং আগে পরিপক্ব হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। জেনারেল জের্সের সদস্যদের উচ্চ বিদ্যালয়ে স্নাতক হওয়া এবং কলেজে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তারা তাদের ক্যারিয়ার নির্ধারণ করার বিষয়েও অনেক বেশি সতর্ক।
আগের যেকোনো প্রজন্মের তুলনায় জেনার্সদের পিতা-মাতার অন্তত একজন কলেজে স্নাতক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মদ্যপান বা সিট বেল্ট না পরে গাড়িতে চড়ার সম্ভাবনাও কম পাওয়া গেছে।
এর একটা কারণ হতে পারে যে, তাদের বেশিরভাগ জেনারেশন এক্স পিতামাতার তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠেছেন; যারা মূলত শৈশব নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। আরেকটি কারণ হতে পারে যে, জেন জের্সরা ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মন্দার সময় বেড়ে উঠছিলেন, সেই সময় তারা তাদের আশেপাশের প্রাপ্তবয়স্কদের আর্থিক সমস্যা এবং কর্মসংস্থানে অস্থিরতার সম্মুখীন হতে দেখেছিলেন।