তৌহিদ হোসেন সরকার
কুমিল্লা, ৫ আগস্ট
কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমীর মিলনায়তন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। স্টেজে আলো ছড়াচ্ছিলো শহীদদের প্রতিকৃতির উপর। এক ঝাঁক আবেগ, ক্ষোভ আর প্রত্যয়ের আলোতে অনুষ্ঠিত হলো জুলাই বিপ্লবের প্রথম বর্ষপূর্তির শহীদ পরিবার ও যোদ্ধা সম্মিলন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিরুল কায়ছার। কিন্তু সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী ভাষণটি দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরীর আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। তাঁর কণ্ঠে ছিলো তীব্র প্রতিবাদ, গভীর বেদনা এবং এক অনড় অঙ্গীকার।
“আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে চাই, রাজনীতির দেয়াল ভেঙে সমাজে শান্তি ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই,” – দৃঢ় স্বরে বলেন তিনি।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজি ও বৈষম্য মুক্ত সমাজ গঠনের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের এক ছাতার নিচে আসতে হবে। অথচ প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কুমিল্লার শহীদদের জন্য ন্যায্য ক্ষতিপূরণ আদায় করতে চলমান রেখেছে যা আরও দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার।
“জুলাই শহীদদের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয় ঢাকায়, কুমিল্লার শহীদ পরিবারগুলো ন্যায়বিচার বঞ্চিত যেন না হয়।সতর্ক করে প্রশাসনের উদ্যেশ্য এ কথা বলেন,
তার বক্তব্যে উঠে আসে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ এবং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ‘ফাঁসির দাবি’ – যা উপস্থিত হাজারো মানুষের মধ্যে আলোড়ন তোলে। এক পর্যায়ে হলজুড়ে “স্বৈরাচারের ফাঁসি চাই” ধ্বনিতে কেঁপে ওঠে।
এই সম্মেলনে কেবল জামায়াত নয়, উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমিনুর রশিদ ইয়াসিন, সহ
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাঁদের অনেকেই বক্তব্যে কুমিল্লায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের কথা বলেন।
কাজী দ্বীন মোহাম্মদ আরও বলেন,
“আমাদের এই কুমিল্লা একদিন শহীদদের রক্তে লাল হয়েছিল। আজ আমাদের দায়িত্ব সেই রক্তের মর্যাদা রক্ষা করা। বিভক্তি নয়, আমাদের প্রয়োজন একতা।”
এক বছর আগে…
২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কুমিল্লা ছিল এক প্রতিবাদী নগরী। শহীদ হয়েছিলো একাধিক যুবক। সেই দিনের স্মৃতি আজও তাজা শহীদ পরিবারগুলোর চোখে-মুখে।
অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা তুলে দেয়া হয়। কেউ কেউ আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। চোখের জলে ভিজে যায় কাগজের স্মারক।
তবে একথা নিশ্চিত, কুমিল্লা আজও জেগে আছে। প্রতিবাদের সেই আগুন এখনো নিভে যায়নি। কাজী দ্বীন মোহাম্মদের আহ্বান আজ শুধু একটি দলের নয়—পুরো কুমিল্লার হৃদয় থেকে উচ্চারিত একটি চেতনার নাম।