নিজস্ব প্রতিনিধি।।
হত্যাসহ ৯ মামলার আসামী, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে জুতার মালা পড়ানোয় রাতারাতি হিরো বনে যায় সে। এরই সুযোগ নিয়ে তার পক্ষে উপজেলা বিএনপি মিছিল করে। উপজেলা ২৪শে ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কানুর ঘটনায় বিচার চেয়ে মানববন্ধন করে।
এ নিয়ে কানুর এলাকা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে বিতর্ক শুরু হয়। একজন স্বীকৃত অপরাধীর পক্ষে বিএনপি’র মিছিল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যানারে মানববন্ধন নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। উপজেলা বিএনপি’র মিছিলের সমালোচনা করে বিবৃতি প্রদান করেন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি জিএম তাহের পলাশী, উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি সাজেদুর রহমান মোল্লা হিরণ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তোফায়েল হোসেন জুয়েল।
চৌদ্দগ্রামের রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক বাহার রেজার উপর ২০২৩ সালের জুনে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা করে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের লোকজন। সন্ত্রাসী হামলায় বাহার রেজা বীরপ্রতীকের পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়। ঐ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সোচ্চার হতে দেখা যায়নি।
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামানকে বৃদ্ধ অবস্থায় রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার করে চারটি মামলা দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। প্রতি মাসে একাধিকবার হাতকড়া পড়িয়ে আদালতে আনা নেয়া করে পুলিশ। এ ঘটনায় তখন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা কমান্ড কিংবা কুমিল্লা জেলা কমান্ড কোন বিবৃত্তি প্রদান করেনি। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক দুই কমান্ডার দাবী করেন তখন রাজনৈতিক চাপে তারা প্রতিবাদ করতে পারেনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান বলেন, ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে আমাকে অন্যায়ভবে গ্রেফতার করে ৪টি মামলায় আসামী করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। ঐসময় চৌদ্দগ্রাম কিংবা কুমিল্লার কোন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন বিবৃতি দেয় নাই। মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ে আমি এখনো ৩টি মিথ্যা মামলায় আসামী হয়ে জীবনযাপন করছি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বাবু প্রমোদ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, সংগত কারণে মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান গ্রেফতারের সময়ে আমরা কোন বিবৃতি প্রদান করতে পারিনি। তবে ক্ষোভ জানিয়েছিলাম। লিখিত ক্ষোভ নাকি এমন প্রশ্নে বাবু প্রমোদ থেকে কোন উত্তর মেলেনি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আবুল হাশেম দাবী করেন, মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান রাজনৈতিক কারণে মামলার আসামী এবং গ্রেফতার হয়েছেন। তাই কোন বিবৃতি প্রদান করা হয়নাই। আব্দুল হাই কানু রাজনীতি করলেও চৌদ্দগ্রামে কোন রাজনীতি করেননি বলেও দাবী করেন তিনি। এছাড়া বীরপ্রতিক বাহার রেজার উপর হামলার ঘটনাটিও রাজনৈতিক। তার উপর হামলার ঘটনায় কুমিল্লায় মানববন্ধন হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।
যুদ্ধকালীন কমান্ডার আবু তাহের বিএসসি বলেন, ব্যক্তি আঃ হাই কানু অপরাধী। দেশীয় আইনে তার বিচার হওয়া দরকার। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে জুতার মালা পড়ানো নিন্দনীয়। এসময় তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে গ্রেফতার মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে তৎকালীন এমপি মুজিবুল হকের ভয়ে কেউ বিবৃত্তি প্রদান করেনি। সঠিক মর্যাদা না পাওয়ায় ২০১৪ সাল থেকে তিনি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের এবং উপজেলা প্রশাসনের কোন মিটিংয়ে উপস্থিত হননি বলেও জানান তিনি।