সমতট ডেস্ক।।
এলপি গ্যাসের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। দেশে বছরে এলপি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় দেড় লাখ টন। শিল্পায়নের ফলে চাহিদা আরো বাড়ছে। রান্নার কাজে এলপিজি ব্যবহার শুরু হয় ২০০৫ সালে। পাইপলাইনে বাসাবাড়িতে গ্যাস-সংযোগ বন্ধের পর এলপিজির ব্যবহার আরো বেড়ে গেছে। বসতবাড়ি ছাড়াও হোটেল, রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও মোটরগাড়িতে এলপি গ্যাসের ব্যবহার রয়েছে। পাঁচ বছর আগে এর ব্যবহার ছিল ৮০ হাজার মেট্রিক টন। আগামী পাঁচ বছরে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে ২ মিলিয়নে পৌঁছাবে।
চলুন দেখে নেয়া যাক বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা পেতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ
অনিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ গ্যাস সিলিন্ডারকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এজন্য নিয়মিত ভালভ ও সংযোগস্থলে সাবান পানির দ্রবণ প্রয়োগ করে গ্যাসের লিক পরীক্ষা করতে হবে। এ সময় বুদবুদের সন্ধান পাওয়া গেলে কিংবা লিকেজ সনাক্ত করা হলে অবিলম্বে সহায়তার জন্য কোনো অভিজ্ঞ কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
এ ছাড়াও সিলিন্ডারটি নিয়মিত মুছে রাখতে হবে, যাতে কখনও মরিচা না ধরে।
ভুল সংযোগ
চুলা বা অন্যান্য যন্ত্রপাতির সঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডারের সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংযোগে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য সংযোগগুলো ঠিকভাবে হয়ে কি না এবং কোথাও লিকেজ আছে কি না নিশ্চিত করতে হবে।
অস্থায়ী সংযোগ বা সরঞ্জাম পরিবর্তন এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা, এর ফলে গ্যাস লিকেজ বা বিস্ফোরণ হতে পারে। এ ছাড়া ব্যবহৃত চুলার কোথাও কোনো লিকেজ আছে কি না, তাও নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া সিলিন্ডার পরিবহনের পর চুলার সঙ্গে সংযোগ দেওয়ার আগে প্রায় এক ঘণ্টা গ্যাসের বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।
বায়ুচলাচল উপেক্ষা করা
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করার সময় অপর্যাপ্ত বায়ুচলাচল স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। গ্যাসের যন্ত্রগুলো অক্সিজেন গ্রহণ করে। একইসঙ্গে কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন করে, যা আবদ্ধ স্থানের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

এজন্য রান্নাঘরে, বিশেষ করে বাসাবাড়িতে কিংবা ছোট কক্ষে বাতাস চলাচল নিশ্চিত করার জন্য সব সময় জানালা খুলে বা এক্সজস্ট ফ্যান ব্যবহার করে সঠিকভাবে বায়ু চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।
সচেতনতার অভাব
গ্যাস সিলিন্ডারের সুরক্ষা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব একটি সাধারণ ভুল, যা অধিকাংশ পরিবার করে। এজন্য গ্যাস সিলিন্ডারের সঙ্গে সম্পর্কিত সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং কীভাবে সেগুলো নিরাপদে পরিচালনা করা যায় সে সম্পর্কে শিশুসহ পরিবারের সকল সদস্যকে শিক্ষিত করা গুরুত্বপূর্ণ৷
পরিবারের সকল সদস্যকে শেখাতে হবে, কীভাবে গ্যাসের লিক সনাক্ত করতে হয় এবং জরুরি পরিস্থিতিতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করতে হয়। তা হলেই সম্ভব্য ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
‘এলপিজি বিধিমালা, ২০০৪’-এর তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে, কোনো লাইসেন্সধারী লাইসেন্সযোগ্য পরিমাণ এলপিজি লাইসেন্স প্রাপ্ত নন, এমন কাউকে দিতে পারবেন না। কিন্তু কোনো প্রকার লাইসেন্স ছাড়াই এলপি গ্যাস ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।
‘গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা, ১৯৯১’-এর চতুর্থ পরিচ্ছেদে বলা হয়েছে, গ্যাস পূর্ণ সিলিন্ডার কোনো দ্বিচক্রযানে পরিবহন করা যাবে না, কোন যানে সিলিন্ডার পরিবহনের ক্ষেত্রে সিলিন্ডারের কোনো অংশ উক্ত যানের বাইরে থাকা যাবে না। গ্যাস পরিবহনেও রয়েছে আমাদের অসচেতনতা। জনাকীর্ণ স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার আঘাতপ্রাপ্ত হলে কিংবা পড়ে গেলে ঘটতে পারে ব্যাপক প্রাণহানি।