সমতট ডেস্ক।। রাজধানীর পূর্বাচলে সাবেক সেনা কর্মকর্তার ছেলের গাড়ির ধাক্কায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ নিহতের ঘটনায় মামলা নিতে অনীহার অভিযোগ করেছে নিহত মাসুদের সহপাঠীরা।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বুয়েট শহীদ মিনারে লিখিত এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা এ অভিযোগ করেন। এছাড়া এদিন বিকেলে মাসুদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিতের দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন তারা। শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন। এছাড়া গণমাধ্যমে হত্যাকাণ্ডকে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে একপর্যায়ে তারা দেখতে পান, দুর্ঘটনায় জড়িত প্রাইভেট কারটির চালক এবং তার সহযাত্রীদের প্রত্যক্ষদর্শী ও পথচারীরা ঘিরে রেখেছেন। উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে তারা জানান, মোটরসাইকেলে থাকা মাসুদ, অমিত ও মেহেদিকে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য নীলা মার্কেট মোড়ে কতর্ব্যরত পুলিশ দাঁড় করায়। এসময় পেছন থেকে একটি প্রাইভেট কার বেপরোয়া গতিতে এসে স্থির দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলসহ তিনজনকে আঘাত করে। প্রাইভেট কারটি চালাচ্ছিলেন মুবিন আল মামুন। তার সঙ্গে ছিলেন মিরাজুল করিম ও আসিফ চৌধুরী।
বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, চালক মুবিন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে। শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে চালকের বাবাকেও সেখানে দেখতে পান। পরে তারা প্রাইভেট কারে অ্যালকোহল ও মাদকজাতীয় দ্রব্য দেখেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পৌঁছায়। পুলিশ প্রাইভেট কারের চালকসহ তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রথমে রূপগঞ্জ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং পরে তাদের রূপগঞ্জ থানায় নেওয়া হয়। এসময় শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে থানায় পৌঁছান। থানায় ঘটনার বিবরণ জানার পরে কর্তব্যরত এসআই মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসহযোগিতামূলক আচরণ করেন। পরদিন সকাল আটটায় আরও একদল শিক্ষার্থী বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষক, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা, প্রধান নিরাপত্তাকর্মীসহ থানায় যান। তখন থানায় কোনো ওসি ছিলেন না এবং যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি দেরি করতে থাকেন। ঘণ্টাখানেক পর ওসি থানায় আসেন এবং শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, এসময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুন এবং চালকের পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। অভিযুক্তের মা নানাভাবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেবেন বলে জানান।
প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা ৫টি দাবি উত্থাপন করেছেন। সেগুলো হলো-
১. যেকোনো মূল্যে এই হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ।
২. আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার অবশ্যই বিবাদীপক্ষকে বহন করতে হবে।
৩. নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বিবাদীপক্ষকে বাধ্য করতে হবে।
৪. তদন্ত কার্যক্রমে বাধাদানের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আর কারও প্রাণ যেন না যায় এবং সড়কে নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সেই ব্যাপারে যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ৩০০ ফুট নীলা মার্কেট (কুড়িল-কাঞ্চন সড়ক) এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় বুয়েটের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুহতাসিম মাসুদ (২২) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তিনি রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসিন্দা মাসুদ মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় আহত দু’জন মেহেদী হাসান খান (২২) ও অমিত সাহা (২২) বুয়েটের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী। মেহেদী কুমিল্লা সদর উপজেলার মফিজুর রহমান খানের ছেলে আর অমিত ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা পৌরসভার তপন কুমার সাহার ছেলে। মেহেদী রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে আর অমিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর মুহতাসিমের বাবা সড়ক পরিবহন আইনে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন প্রাইভেট কারের চালকের আসনে থাকা মুবিন আল মামুন (২০)। তিনি রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার বাসিন্দা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে। গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন ওই গাড়িতে থাকা মিরপুরের পীরেরবাগের রিজওয়ানুল করিমের ছেলে মিরাজুল করিম (২২) ও উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের বাহাউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আসিফ চৌধুরী। তারা তিনজনই শিক্ষার্থী। ডোপ টেস্টে (মাদক পরীক্ষায়) তাদের দুজনের শরীরে অ্যালকোহলের উপস্থিতি ধরা পড়েছে।