সমতট ডেস্ক ।।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে একের পর এক মামলা শুরু হয়েছে। এই মামলাগুলোর প্রধান আসামির তালিকায় রয়েছেন পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। শুধুমাত্র মামলা দায়েরেই শেষ নয়, অনেকেই এখন রিমান্ডে রয়েছেন, আবার কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে গেছেন। এমনকি, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনের সময় হেলিকপ্টার থেকে র্যাবের গুলিতে ১২ বছর বয়সী একটি শিশুকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই সঙ্গে, রাজধানীর পল্টনে এক রিকশাচালককে হত্যা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক হত্যার মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলার আবেদন আদালতে গৃহীত হয়েছে। গত তিন দিনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যা মামলা এবং একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
আদালত এখন সরাসরি এজাহার (এফআইআর) হিসেবে এসব মামলা গ্রহণ করছে, যা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। এদিকে, রাজধানীর পল্টনে এক রিকশাচালককে হত্যা মামলায় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা এবং হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই মামলাগুলি দেশব্যাপী আলোচনা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে। অনেকের মতে, এই মামলাগুলি শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যেতে পারে, যেখানে বর্তমান প্রশাসন প্রাক্তন সরকারের কর্মকাণ্ডের বিচারের মাধ্যমে নিজেদের বৈধতা ও জনগণের আস্থা স্থাপনের চেষ্টা করছে।
এছাড়া, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সংঘটিত গণহত্যা, নির্যাতন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এই তদন্তে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ সংগ্রহ করে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ যাচাই করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, গত ১৬ জুলাই নিউমার্কেট এলাকায় কর্মচারী শাহ জাহান আলী হত্যার মামলায় শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এখন ডিবির রিমান্ডে রয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এই ধারাবাহিক মামলাগুলি বর্তমান পরিস্থিতির একটি গভীর প্রতিচ্ছবি, যা রাজনৈতিক অঙ্গনের উত্তেজনা আরও বাড়াচ্ছে। দেশের জনগণ এখন নজর রাখছে, কীভাবে এই মামলাগুলি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল কোন দিকে মোড় নেবে।