সমতট ডেস্ক: কুমিল্লার সড়ক ব্যবস্থাপনা বর্তমানে চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, যত্রতত্র পার্কিং, ফুটপাত দখল, এবং রাস্তার মাঝেই নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখার কারণে পুরো নগরী যেন যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। বিশেষ করে, কান্দিরপাড় থেকে মনোহরপুর পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয়ায় এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য সড়কে। ফলে নগরীর অন্তত ২০টি স্থানে মারাত্মক যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
গেলো কয়েক মাসে কুমিল্লা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও অন্যান্য যানবাহনের সংখ্যা পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে। ফলে নিয়ম না মেনে যত্রতত্র এসব যানবাহন চলাচলের কারণে যানজট আরও তীব্র হয়েছে। পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় যানজটের মাত্রা আরও বেড়েছে। কান্দিরপাড় এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রাখার ফলে নগরীর পূর্বাঞ্চল থেকে বাতুরতলা, নজরুল এভিনিউ ও অন্যান্য এলাকায় যেতে দীর্ঘ পথ ঘুরতে হচ্ছে, ফলে বাড়তি সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে নাগরিকদের।
নগরীর বাসিন্দা রাফি শামস্ জানান, “কুমিল্লার ট্রাফিক ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘ যানজট ও অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”
কেনাকাটা করতে আসা হাজী কবির হোসেন বলেন, “কান্দিরপাড় এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করা হলেও এর কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সড়কটি হকারদের দখলে থাকায় সাধারণ পথচারীদের চলাচল করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।”
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সারোয়ার মোহাম্মদ পারভেজ জানান, “কুমিল্লা শহরে বর্তমানে ৫২ জন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য কাজ করছেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। তবুও যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানান, “৫ আগস্টের পর থেকে শহরের যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। আগে যেখানে শহরে ৫-৬ হাজার রিকশা ও অটোরিকশা ছিল, এখন তা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে জেলা পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান জানান, “ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে ভাসমান ব্যবসায়ীরা ফুটপাত ও সড়ক দখল করায় পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ঈদ বাজারে চুরি, ছিনতাই প্রতিরোধে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও জেলার অন্যান্য আঞ্চলিক সড়কেও পুলিশ কাজ করছে, যা ঈদ পরবর্তী সময়েও অব্যাহত থাকবে।”
নগরবাসী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত করাসহ পুলিশ ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগই পারে কুমিল্লার যানজট সমস্যার সমাধান করতে।
সূত্র: কুমিল্লার কাগজ