সমতট ডেক্স : কুমিল্লার কোল ঘেঁষে বয়ে চলা গোমতী নদীতে চলছে মাছ শিকারের উৎসব। ফাল্গুনের শুরুতে নদীর পানি কমে যাওয়ায় প্রতিবছরের মত এবারো পলো দিয়ে মাছ ধরার এই উৎসবে শামিল হয়েছে নানা বয়সি মানুষ। প্রতি বছর শীতের শেষে বসন্তের শুরুতে নদীর উজানে পানি কমে আসলে কুমিল্লা ও আশপাশের এলাকার সৌখিন মাছ শিকারীরা দূর দূরান্ত থেকে এসে এই ঐতিহ্যের উৎসবে শামিল হন। এবার ৫ শতাধিক মৎস শিকারি একসাথে নেমেছেন গোমতীতে মাছ ধরার উৎসবে। গোমতী নদীর কুমিল্লা সদর উপজেলার ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্টের কটক বাজার থেকে চানপুর পর্যন্ত নদীতে নেমে হেঁটে একদিনে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় চলে এই মাছ শিকার। পলো, ছিটা জাল, ঠেলা জালে মিলছে বড় বড় রুই, কাতল, বোয়াল, গজার, ্আইড়, মৃগেল মাছ। এছাড়া হাতে ও জালে ধরা পড়ছে টেংরা, বইচা, বাইম, পুঁটিসহ নানা প্রজাতির ছোট মাছও।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সজেমিনে চানপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এক সাথে অসংখ্য মানুষ নানা সরঞ্জাম দিয়ে নদীতে নেমে মাছ ধরছেন। সম্মিলিত এই মাছ ধরার উৎসব দেখতে সেখানে ভীড় জমিয়েছেন উৎসুক মানুষজন। এসময় কারো পলো কিংবা জালে বড় মাছ ধরা পড়লেই হই-হই রবে মুখরিত হয়ে উঠছে পুরো নদী এলাকা।
সৌখিন এই মৎস শিকারিরা জানান, মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেই এই জমায়েত হয় প্রতি বছর। যে মাছ ধরা হয় তা- বিক্রির জন্য নয়। যারা মাছ ধরতে আসেন তারা পেশাদার জেলেও নন। শুধু মাত্র শখের বশে নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ এক সাথে নামেন নদীতে। শখের মাছ যায় ঘরে। এই রেওয়াজ অন্তত শত বছরের। শুধু গোমতীতে নয়- কুমিল্লার কাকড়ী নদী, ডাকাতিয়া নদী, সোনাইছড়ি খাল ও কার্জন খালেও এই উৎসব চলবে বলে জানান তিনি।
গোমতী নদী থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূর চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর থেকে পলো নিয়ে মাছ ধরতে এসেছেন সত্তোরোর্ধ্ব ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন। তিনি হোসেন জানান, গত ৪০ বছর ধরে তিনি এই উৎসবে অংশ নেন। মাছ না পেলেও দুঃখ নেই কারো। উৎসবে অংশ নেয়ার জন্য এই দিনটি দোকান বন্ধ রেখেছেন তিনি।
মৎস্য শিকার উৎসবে অংশ নেওয়া কুমিল্লা সদর এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হাসান বলেন, আমি একটি গজার মাছ ও কিছু বাইম মাছ পেয়েছে। আমরা চার ভাই এসেছি মাছ ধরতে। অন্যরা বোয়াল আর কাতল মাছও পেয়েছে। গত বছর বন্যা হওয়ায় এবছর মাছ বেশি পাওয়া গেছে।
সদর দক্ষিণ উপজেলার হাজত খোলার বাসিন্দা সৌদি আরব প্রবাসী রাসেল বিদেশ থেকে ছুটিতে এসে সময় মিললেই এই মাছ ধরার উৎসবে চলে আসি। সারাদিনের জন্য সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে আমরা ৫ জন এসেছি। ভালো লাগছে। তিনি ৮ কেজি ওজনের একটি মৃগেল মাছ পেয়েছেন বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাছ শিকারীদের প্রতি বছর যিনি একত্রে করেন তিনি হলেন সর্দার আবদুর রহিম। তার বাড়ি সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা এলাকায়। তিনি জানান, গোমতী নদীতে পানি কমে আসলেই আমরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে একটি দিন তারিখ ঠিক করি। পরে একসাথে নেমে পড়ি নদীতে। বেশির ভাগই পলো নিয়ে আসেন মাছ ধরতে। কেউ কেউ জাল আনেন। প্রতি বছর নদীতে এক সাথে মাছ ধরা আমাদের প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে।