সমতট ডেক্স: কুমিল্লা নগরীসহ আশপাশের এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। শীতের শুরু থেকে জ্বালানি গ্যাসের এ সংকটে দিনের বেলায় জ্বলছে না রান্নার চুলা। এতে মানুষের দিন কাটছে দুর্ভোগে। চুলা পাশে রেখে সিলিন্ডার দিয়ে কিংবা লাড়কির দিয়ে মাটির চুলায় রান্না করছেন গৃহিনীরা। গত এক মাস ধরে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাসাবাড়িতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। ঠিক কী কারণে হঠাৎ গ্যাসের এ সংকট তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে গ্ৰাহকদের মাঝ। তবে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কুমিল্লা নগরীর সংরাইশ, নতুন চৌধুরীপাড়া, চর্থা, হজরতপাড়া, নুরপুর, চকবাজার, চাঁনপুর, শুভপুর, নুরপুর, সংরাইশ, চকবাজার, চাঁনপুর শুভপুর এবং প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় এবং শহরতলীর বালুতুপা, চাঁপাপুর, বিবির বাজার এলাকায় গ্যাসের বেশি সংকট। ভোর ৬টায় গ্যাস চলে যায়। কখনও সন্ধ্যা ৭টায়, কখনও রাত ১০টায় গ্যাস আসে। রান্নার সময় গ্যাস না থাকায় মানুষ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন। এছাড়া বেশি শীতের দিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল বেলায় গ্যাস থাকে না।
কুমিল্লা নগরীর নুরপুর এলাকার গৃহিণী পারভিন বেগম বলেন, রান্নাবান্নার এ ভোগান্তি আমাদের দীর্ঘদিনের। বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে গ্যাসের এ তীব্র সংকট আমাদেরকে বেশ ভোগাচ্ছে। বিশেষ করে শীতের দিনগুলোতে গ্যাসের তীব্র সংকট থাকে। ভোরে ফজরের নামাজের পর থেকে চুলার আগুন থাকে নিভু নিভু অবস্থায়। তাই আমরা বাধ্য হয়ে গভীর রাতে উঠে আমাদেরকে রান্না সারতে হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান আমরা দ্রুত চাই।
কুমিল্লার কান্দিরপাড় সোনালী ব্যাংক গলির গৃহিনী ফারজানা শাম্মি বলেন, ভোর ৬ টার পর থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত চুলায় গ্যাসের যে চাপ থাকে সেটি একেবারে নিভু নিভু অবস্থায়। সকালে গ্যাসের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সন্তানরা নাস্তা খেয়ে স্কুল ও কলেজে যেতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে ভোর ৪/৫ টায় উঠে রান্নাবান্না করতে হচ্ছে। শীতের কারণে প্রতিদিন উঠা সম্ভাব হয় না। প্রতিমাসে বিল দিলেও প্রয়োজনের সময় গ্যাস থাকে না, মানুষ যখন ঘুমাতে যায় তখন গ্যাস আসে। রান্না করে পরিবারের সদস্যদের খাওয়ানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার মাসে আড়াই হাজার টাকার সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে হয়।
কুমিল্লা শহরতলীর শুভপুর এলাকার গৃহিণী হাবিবা আক্তার বলেন, ভোর চারটার সময় উঠে রান্না করতে হয়। সকাল ৮টার মধ্যেই গ্যাস চলে যায়। এখন সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। লাইনের গ্যাস নামেই রয়েছে। বছরের বেশিরভাগ সময়ই আমাদের এলাকায় এই অবস্থা।
কুমিল্লা নগরীর সংরাইশ এলাকার রত্না বেগম বলেন, রান্নার চুলায় গ্যাস সংযোগ থাকলেও গভীর রাত ছাড়া দিনে কিংবা প্রয়োজনীয় সময়ে গ্যাস চোখে দেখি না। আবার প্রতিমাসেও গ্যাস বিল দিয়ে যাচ্ছি আমরা। দৈনন্দিন রান্নার কাজ আমাদেরকে লাড়কি ব্যবহার করে মাটির চুলায় রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে। আমাদের এ দুর্ভোগ কেউ দেখছে না। বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে বহুবার সমস্যার কথা জানিয়েছি তারা কোন সমাধান পাইনি। শীত কিংবা গরম সবসময় আমাদের এলাকায় গ্যাসের এ সংকট থাকেই।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লায় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পাঁচ লক্ষাধিক গ্রাহক রয়েছে। তারমধ্যে অর্ধেক বেশি আবাসিক গ্ৰাহক। গ্যাসের চাহিদা যে পরিমাণে বাড়ছে সে পরিমাণে উৎপাদন বাড়ছে না। এছাড়াও ৩০ বছর আগের ৭০ পিএস আই এর পাইপলাইনের কারণও রয়েছে। দ্রুত কারণ চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজছে বাখরাবাদ।