সমতট ডেস্ক: দেশের কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের উন্নয়নে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এসএমই ফাউন্ডেশনকে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। একই সাথে এসএমই নীতিমালা-২০২৫ বাস্তবায়নেও সুনির্দিষ্ট বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে। সোমবার (২৪ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এবারের বাজেটে তাদের দেওয়া ১৪০টি প্রস্তাবের মধ্যে ৪১টি গৃহীত হয়েছে, যা দেশের এসএমই খাতের প্রসারে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতায় নারী উদ্যোক্তাসহ প্রান্তিক পর্যায়ের ১০ হাজার সিএমএসএমই উদ্যোক্তার মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, আগামী তিন বছরে ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, ২৫ হাজার উদ্যোক্তাকে দক্ষতা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান, বিভাগীয় শহরে এসএমই ডিসপ্লে ও সেলস সেন্টার স্থাপন, জেলা শহরে আঞ্চলিক এসএমই পণ্যমেলার আয়োজন, এবং সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ প্রতিষ্ঠাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি প্রস্তাবিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো ইতোমধ্যেই এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মপরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশন আশা করছে, এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ থাকবে। তারা আরও প্রস্তাব করেছে যে, সিএমএসএমই খাতের ১০ হাজার উদ্যোক্তার জন্য ঘোষিত এক হাজার কোটি টাকার ঋণ এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই বিতরণ করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস মহামারীর সময় ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার প্রদত্ত ৩০০ কোটি টাকার তহবিল নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট শর্ত মেনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সফলভাবে বিতরণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। বর্তমানে সেই অর্থে গঠিত ‘রিভলভিং তহবিল’ থেকে তৃতীয় দফার ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে।
এসএমই খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রতি বছর বাজেটের আগে এসএমই ফাউন্ডেশন শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমস ডিউটি ও আর্থিক প্রণোদনা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেশ করে। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত তাদের মোট ৫৫৭টি প্রস্তাবনার মধ্যে ৮৫টি প্রস্তাবনা সরকার বা এনবিআর কর্তৃক গৃহীত হয়েছে এবং বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ৩২ শতাংশ। ২০১৩ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে ৭৮ লাখেরও বেশি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা মোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ৯৯ শতাংশেরও বেশি। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশই এসএমই খাতে, যেখানে প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি জনবল কর্মরত। অধিক জনসংখ্যা এবং সীমিত সম্পদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি একটি শ্রমনিবিড় ও স্বল্প পুঁজিনির্ভর খাত, যা স্বল্প উৎপাদনকাল হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও সিএমএসএমই খাতের বিকাশ ও উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।