সমতট ডেস্ক ।। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, কিশোরটি গত ১২ দিন ধরে রংপুর কারাগারে বন্দী রয়েছে।
কারাগারে থাকা ওই কিশোরের নাম আফিল শাহরিয়ার মাহিম। সে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র।
মাহিমের বাবা মো. শাহজালাল বলেন, ‘আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আমার ছেলে মাহিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জন্ম সনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস।’
রংপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের কৌঁসুলি (পিপি) রফিক হাসনাইন গণমাধ্যমকে জানান, আবু সাঈদ হত্যা মামলার এজাহারে মাহিমের নাম ছিল না, তবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মাহিমের বাবা জামিনের জন্য আবেদন করেছেন, যার শুনানি আগামী ৪ আগস্ট হবে।
মাহিমের বাবা শাহজালাল আরও জানান, গত ১৮ জুলাই বাড়ির কাছে পার্কারমোড়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল মাহিম। সে কলেজের ইউনিফর্ম পরেছিল। পার্কারমোড় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই। পার্কারমোড়ের চারপাশে সংঘর্ষ শুরু হলে আতঙ্কিত হয়ে মাহিম বাড়ির উল্টো দিকে দৌড়াতে শুরু করে। সে সময় তার পায়ে শটগানের ছররা গুলি লাগে। সারাদিন খোঁজ করেও মাহিমকে পাওয়া যায়নি। রাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে একজন ফোন করে জানান, মাহিম তাদের হেফাজতে আছে। পরদিন ১৯ জুলাই মাহিমকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছিল।
কিন্তু, পর দিন ফোন করলে সেই ব্যক্তি জানান, মাহিমকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। ওইদিন বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করে রংপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
মাহিমের বোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে উল্লেখ করেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহিমের পরিবারকে তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আশ্বাস দেন যে, মাহিম সুস্থ আছেন এবং বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে পরিবারের সদস্যদের আদালতে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ‘আজ আদালতের কার্যক্রম শেষে মাহিমকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাজহাট থানার এসআই জিল্লুর রহমান বলেন, যে পরিস্থিতিতে মাহিমকে গ্রেপ্তার করা হয় সেই সময় তার বয়স নির্ধারণের সুযোগ ছিল না। পরে তাকে আদালতে পাঠানো হয় এবং আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বলেন, বিভিন্ন ভাবে তার বয়স নিশ্চিত হওয়ার পর, তার জামিনের ক্ষেত্রে পুলিশ সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য, ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় যে, তিনি দায়িত্বরত পুলিশের জন্য হুমকির কারণ ছিলেন না। তারপরও ১৬ জুলাই পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়। পুলিশের প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) উল্লেখ করা হয়েছে, সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হননি। এফআইআরে বলা হয়েছে, ‘বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন দিক থেকে গুলি ছুড়তে থাকে এবং ইটের টুকরো নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে এক শিক্ষার্থীকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখা যায়।’