আজ রাত ৮টায় বঙ্গভবনে শপথ নেবে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু, এ সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো রূপরেখা নেই, তাই এটি সংবিধানের বাইরে গঠন করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ তিন বছর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেছেন।
সংবিধানের ১২৩(৩)(ক) ও (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে গেলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তবে, বর্তমান পরিস্থিতি ‘বিশেষ’ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এই সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বলে রাজনৈতিক দলগুলো মত দিয়েছে। সাধারণ নির্বাচনের পর গঠিত সংসদে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হবে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্য সংখ্যা ১৫ হতে পারে। ড. ইউনূসকে সশস্ত্র বাহিনী সব ধরনের সহায়তা দেবে। ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ড. ইউনূস আজ দুবাই থেকে দেশে ফিরবেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী নির্দলীয় সরকার গঠন এবং ৬ মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করা হলেও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা তা নাকচ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, “আমরা এক্সট্রা অর্ডিনারি পরিস্থিতিতে সরকার গঠন করছি। মেয়াদ এখনও ঠিক করা হয়নি, আলোচনা চলছে।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, অভ্যুত্থানে যারা আসবেন, তারা যেভাবে বলবেন, সেভাবে করা যাবে। পরবর্তী সংসদে বিষয়টি অনুমোদন করতে হবে।”
এদিকে, ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ড. ইউনূস কম সময়ের জন্য দায়িত্ব নিয়ে সরকারে গুণগত পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় বলে মনে করেন।
সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল বলেছেন, “সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া যেতে পারে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবে ছাত্ররা রাজি না হওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্র কাঠামোতে গুণগত পরিবর্তন করতে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, “নতুন সরকারের প্রথম কাজ হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের তালিকায় আছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আলী ইমাম মজুমদার, ড. শাহ্দীন মালিক, ড. তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী, মো. তৌহিদ হোসেন, শহীদুল্লাহ খান বাদল, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।
এটি একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে আন্তঃবর্তীকালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। সময়ই বলে দেবে, এ সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে এবং কীভাবে তারা দেশের সমস্যাগুলো সমাধান করবে।